নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে টানা দুদিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে রাজধানীর নিউমার্কেটের বেশিরভাগ দোকানপাট। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকান খোলার স্বস্তি থাকলেও নতুন করে আবার কোনো উত্তেজনা তৈরি হয় কি না, এ নিয়ে তাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েই গেছে।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে নিউমার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভোরে দোকান খোলার সিদ্ধান্ত আসার পরই সকালে অনেক ব্যবসায়ী দোকান খুলেছেন। অনেকে দোকান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গতকাল বুধবার (২০ এপ্রিল) দিনগত রাতে রাজধানীর সায়েন্সল্যাবে অবস্থিত বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ী মালিক সমিতি, ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে মার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নিউমার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী মো. আলাউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ভোরে দোকান খোলার ঘোষণা শুনে দোকান খুললাম। ছাত্ররা বিভিন্ন দাবি জানাচ্ছে, সেগুলোর কিছু মেনেও নিয়েছে। তবে এখনো শঙ্কা পুরোপুরি কাটেনি। শঙ্কা নিয়েই দোকান খুলেছি। দাবি-দাওয়া নিয়ে আবার কী হয়, বোঝা যাচ্ছে না। তিনদিন দোকান বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। ক্রেতা নাই, বেচাকেনার অবস্থা খুব খারাপ।
ফুটপাতের দোকানি ওমর ফারুক বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। ঈদ ঘিরে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে চাই। দোকান খুললাম। এখন যেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের তিনদিন দফায় দফায় সংঘর্ষের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিউমার্কেট এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সব ধরনের যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে। নীলক্ষেত থেকে সায়েন্সল্যাব ও সায়েন্সল্যাব থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত উভয় রাস্তায়ই যান চলাচল করছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও রাস্তার দুপাশেই যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সকাল থেকে রাখা হয়েছে সাঁজোয়া যান। তবে এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কথা বলেননি।
এদিকে নিউমার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দোকান কর্মচারী মো. মুরসালিন (২৪)। এর আগে মঙ্গলবার রাতে নাহিদ (১৮) নামে এক কুরিয়ার সার্ভিস কর্মীর ঢামেক হাসপাতালে মারা যান।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর ফের দফায় দফায় চলে সংঘর্ষ। দিনভর সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। সংঘর্ষের তৃতীয় দিন বুধবার সারাদিন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করলেও সন্ধ্যার পর আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
তিনদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়ে ঢামেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ পুলিশের অনেক সদস্য আহত হয়েছেন।