আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক রাশিয়া। কিন্তু ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে দেশটির ওপর একঝাঁক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমারা। তাতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শস্য রপ্তানিও। যার ফলে বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহে যেমন ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি হু হু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। তবে এসব বাধা প্রত্যাহার করা হলে এ বছরের মধ্যেই আড়াই কোটি টন খাদ্যশস্য রপ্তানি করতে পারে রাশিয়া। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে এমনটিই জানিয়েছেন সংস্থাটিতে নিযুক্ত রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সংঘর্ষ ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে জাতিসংঘের এক বৈঠকে রুশ প্রতিনিধি বলেন, রাশিয়া এখনো খাদ্য ও জ্বালানির এক দায়িত্বশীল সরবরাহকারী। এ বছর আমরা রেকর্ড সর্বোচ্চ কৃষি উৎপাদন আশা করছি। সেক্ষেত্রে নোভোরোসিস্ক বন্দর দিয়ে আগামী ১ আগস্ট থেকে এ বছর শেষ হওয়া পর্যন্ত আড়াই কোটি টন শস্য রপ্তানি করতে পারি।
এসময় পশ্চিমা প্রতিনিধিদের উদ্দেশে নেবেনজিয়া বলেন, আমরা অন্যান্য কেনাকাটা নিয়েও আলোচনা করতে পারি, যার মধ্যে আগামী জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সম্ভাব্য ২ কোটি ২০ লাখ টন সার রপ্তানির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু আপনাদের যদি নিজেদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহারের কোনো ইচ্ছা না থাকে, তাহলে আমাদের দোষারোপ করছেন কেন? কেন আপনাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ভূ-রাজনৈতিক খেলার কারণে দরিদ্র দেশ ও অঞ্চলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে?
রুশ এ কূটনীতিকের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের খাদ্য পরিস্থিতির অবনতির জন্য রাশিয়ার ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা শুধু অযৌক্তিক নয়, অন্যায়ও বটে।
নেবেনজিয়ার দাবি, ইউক্রেনীয় বন্দরগুলো দিয়ে শস্য রপ্তানি রাশিয়ার কারণে নয়, ইউক্রেনের কারণেই বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, আপনারা দাবি করছেন, আমরা সমুদ্রপথে ইউক্রেন থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বাধা দিচ্ছি। সত্যটা হলো, রাশিয়া নয়, ইউক্রেনই নিকোলায়েভ, খেরসন, চেরনোমর্স্ক, মারিউপোল, ওচাকভ, ওডেসা ও ইউঝনি বন্দরে ১৭টি দেশের ৭৫টি জাহাজ অবরুদ্ধ করে রেখেছে। জলপথে মাইন বসানোর কাজও করেছে ইউক্রেন।
রুশ প্রতিনিধির ভাষ্যমতে, এ অবস্থায় আমরা কীভাবে শস্য রপ্তানির কথা বলতে পারি? আজ এখানে যা-ই বলুন না কেন, কেবল আপনারাই এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারেন।
নেবেনজিয়া আরও দাবি করেন, ইউক্রেনের রপ্তানি করা শস্য দরিদ্র দেশগুলোতে যায় না, সেগুলো দিয়ে ইউরোপের ভাণ্ডার ভরা হয়। এর মাধ্যমেই সম্ভবত অস্ত্রের দাম পরিশোধ করে ইউক্রেন।
তিনি বলেন, একটি যৌক্তিক প্রশ্ন উঠেছে: [ইউক্রেনীয় শস্যের] এসব চালান কোথায় যায়? বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় তাদের কী করার আছে?
রুশ কূটনীতিক বলেন, আমাদের তীব্র সন্দেহ, এসব শস্য তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যাচ্ছে না। তা দিয়ে ইউরোপীয়দের শস্য ভাণ্ডার ভরা হচ্ছে। আমরা যা বুঝছি, ইউক্রেন এভাবেই পশ্চিমাদের পাঠানো অস্ত্রের দাম পরিশোধ করে।
বৈশ্বিক খাদ্য রপ্তানির ১০ ভাগের এক ভাগ সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। বিশ্বের ৩০ শতাংশ গম ও সূর্যমুখী তেলের ৬০ শতাংশ উৎপাদন হয় এ দুটি দেশে। কমপক্ষে ২৬টি দেশ তাদের অর্ধেকেরও বেশি খাদ্যশস্যের জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল।
ইউক্রেনে হামলার পর মস্কোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে গত বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রাশিয়া থেকে সার ও খাদ্যপণ্য বিশ্ববাজারে প্রবেশে কোনো বাধা থাকা উচিত নয়।
সূত্র: তাস, আরটি