নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২২-২০২৩ প্রস্তাবিত বাজেটের উপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি করোনা ও ইউক্রেন সংকটে বিপর্যস্ত, ঠিক এই কঠিন সময়ে জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশ নির্ধারণ করে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এরূপ উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঘোষিত বাজেট আশাব্যঞ্জক হলেও সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও যথাযথ পরিকল্পনা নিশ্চিত করা না গেলে বাস্তবায়নে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে।
শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিসিআই’র সভাপতি তাই এই বক্তব্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন বর্তমান সংকটময় বিশ^ অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্পের ন্যায় সব ধরনের রপ্তানিমুখী কোম্পানির করহারও ১২ শতাংশ করা হয়েছে যা বিসিআই’র দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন। তবে রপ্তানি ক্ষেত্রে উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ১ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। যা বর্তমান বিশ^ পরিস্থিতিতে রপ্তানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে আমরা উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ পূনর্বহাল করার প্রস্তাব করছি।
আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই প্রস্তাবিত বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা উল্লেখ করা হলেও তা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা জরুরী। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠির জন্য রেশনিং ব্যবস্থা জোরদার করা এবং বাজেটে ৫০ লাখ পরিবারকে ১৫ টাকা দরে চাল সরবরাহের কথা বলা হয়েছে। আমরা এই চালের দর পূর্বের ন্যায় ১০ টাকায় নির্ধারনের প্রস্তাব করছি।
ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, বিসিআই মূলত তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি, মাইক্রো ও স্মল শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পায়নের প্রসার নিয়ে কাজ করে চলেছে। বিসিআই মনে করে মাইক্রো ও স্মল শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি, সকল ধরনের ইউটিলিটির উপর মূসক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করছে। স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের টার্নওভার করহার শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ করায় আমরা স্বাগত জানাই। তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের জন্য বাজেটে বিশেষ তহবিল গঠন করে তহবিল বিতরনের জন্য সুষ্ঠ নীতিমালা প্রনয়নের প্রস্তাব করছি।
বিসিআই’র সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট কর ২.৫ শতাংশ কমানো হয়েছে, যা বিসিআই স্বাগত জানায়। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু শর্তারোপ করা হয়েছে, যা বাস্তাবায়ন কষ্টসাধ্য। মূল্যস্ফীতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বিবেচনায় আগামী কর বৎসরের ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করছি। কর ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ, দ্রুত, আধুনিক, যুগোপযোগী হয়রানিমূক্ত এবং সকলকে কর প্রদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কর ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরুরে ডিজিটাল করে কর এসেসমেন্ট সিসটেম ফ্রেন্ডলি সহজ করার প্রস্তাব করছি। যার ফলে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং সকলে কর প্রদানে উৎসাহিত হবে।
স্টিল পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত এইচআর কয়েল ও জিংক এলয় জাতীয় কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে কর হার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এবং বাংলাদেশী পতাকাবাহী সমুদ্রগামী জাহাজের আয় ২০৩০ সাল পর্যন্ত করমুক্ত কারায় এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
বিসিআই সভাপতি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে, দেশের জনগণের চাহিদা ও আকাঙ্খা পূরণে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য বাজেটের এই আকার অবাস্তব নয়। দেশের অর্থনীতির পরিকাঠামো বৃদ্ধির সাথে সাথে বাজেটের আকারও প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুশাসন, যথাযথ মনিটরিং, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাঙ্খিত রাজস্ব আদায়।