শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে সিএসই

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ সুযোগসহ বিভিন্ন সুযোগ দেওয়ার জন্য বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।
চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) মতো আগামী অর্থবছরেও (২০২২-২৩) কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। এতে শেয়ারবাজারে তারল্যসহও সরকারের রাজস্ব বাড়বে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানটির। প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গতকাল শনিবার সিএসই’র পক্ষ থেকে এ দাবি জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম। সিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা রহিত করা হয়েছে। এই সুবিধা আগামী বছর পর্যন্ত বহাল রাখার জন্য আমরা বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। এতে বাজার যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, পাশাপাশি অর্থ পাচারও কমবে বলে আমরা আশা করছি।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়াকে বিভিন্ন পক্ষ থেকে অনৈতিক বলা হচ্ছে। তাহলে আপনারা কেন শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে আফিস ইব্রাহিম বলেন, নৈতিকভাবে আমরা কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে সমর্থন করি না। আমরাও মনে করি এতে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত্রে আমরা শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে এবং শেয়ারবাজারে তারল্য বাড়বে। পাশাপাাশি অর্থ পাচার কমবে। তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যকার কর হারের ব্যবধান ১০ শতাংশ করার দাবি জানান সিএসইর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ারের ক্ষেত্রে, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আগত তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ১০ শতাংশ বা তার কম শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তরকারী লিস্টেড কোম্পানির কর হার না কমিয়ে পূর্বের হার অর্থাৎ ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের কর হার হ্রাসের এই ঘোষণাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ‘তবে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা যেতে পারে’ বলেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি’র সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম। তিনি বলেন, বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান খুবই কম। তাই ভালো কোম্পানি এই বাজারে আসতে আগ্রহী হয় না। কারণ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে নানা ধরনের কমপ্লাইয়ান্স পরিপালন করতে হয়। এতে কোম্পানিগুলোকে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়। ফলে কর হার রেয়াতের প্রকৃত কোনো সুবিধা ভোগ করা যায় না। তিনি আরও বলেন, অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করহার কমিয়ে তালিকা বহির্ভূত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কর হারের ব্যবধান বাড়ানো হলে কর সুবিধা রেয়াতের জন্য ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হবে। এতে একদিকে পুঁজিবাজার সমৃদ্ধ হবে, অন্যদিকে লেনদেন বাড়লে তা থেকে বাড়তি কর আদায় হবে। তাছাড়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা ও জাবাদিহিতা বাড়ে। নানা সংস্থার তদারকিতে থাকতে হয় বিধায় কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমে আসে। তাতে সরকারের কর সংগ্রহ নিশ্চিত হয়।
সিএসই’র জন্য বর্তমানে ৩০ শতাংশ করপোরেট কর হার ধার্য রয়েছে। এটাকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শূন্য হার নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছে সিএসই। এ দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে সিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, কৌশলী বিনিয়োগকারী আকর্ষণ করাসহ স্টক এক্সচেঞ্জের কারিগরি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে মূলধন পুনঃবিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও দক্ষতা ও দীর্ঘমেয়াদে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠনের লক্ষ্যে সিএসই’র আর্থিক সক্ষমতা প্রয়োজন হলেও বর্তমানে এক্সচেঞ্জগুলোর আয় উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
‘তাছাড়া চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশে প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এটি গঠন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কারিগরি সহায়তা, আইন-কানুন প্রণয়ন, প্রশিক্ষন ও গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে’ যোগ করেন আসিফ ইব্রাহিম। সিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছানোর লক্ষ্যে, বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাতের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রয়াসে নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেটে করপোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাত ২৩ শতাংশ। উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকার এ অনুপাত বৃদ্ধির জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করছে, যা খুবই ইতিবাচক উদ্যোগ বলে আমরা মনে করছি।
আরও যেসব দাবি জানিয়েছে সিএসই-
স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের লেনদেনের ওপর বিদ্যমান উৎস কর ০.০১৫ শতাংশ নামিয়ে আনা।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানিগুলোর শেয়ার অব লোড করে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করা। এজন্য বিশেষ কর ছাড় থাকতে পারে।
তালিকাভুক্ত এসএমই কোম্পানির কর হার প্রথম তিন বছর শূন্য শতাংশ ও পরবর্তীতে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা। তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ বাবদ আয় থেকে কেটে রাখা করকে চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করা। তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে পাওয়া করমুক্ত নগদ লভ্যাংশ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা।
মিউচুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ড থেকে পাওয়া সম্পূর্ণ নগদ লভ্যাংশ আয়কর মুক্ত রাখা। বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ড থেকে পাওয়া ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ লভ্যাংশ আয়কর মুক্ত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগামী অর্থবছর হবে খুবই চ্যালেঞ্জিং: আতিউর রহমান
পরবর্তী নিবন্ধভারতকে ১০ লাখ টন গম রপ্তানির অনুরোধ জানালো ‍বাংলাদেশ