বাংলাদেশে বিনিয়োগ-বাণিজ্য বাড়াবে ইতালি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে একযোগে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন ইতালির শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। রোমে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তারা এই বিষয়ে আগ্রহের কথা জানান।

রোববার (৩ জুলাই) রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘প্রথম অর্থনৈতিক কূটনীতি’ সপ্তাহ পালনের অংশ হিসেবে রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘ম্যাপিং অনুশীলন: বাংলাদেশ-ইতালি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।

ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান তাঁর স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন যে বঙ্গবন্ধু একটি ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

তিনি আরও বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ২৫ জুন সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সুসংবাদ উপস্থিত সবাইকে জানান। এক্ষেত্রে দু’দেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং সম্ভাবনাসমূহ কাজে লাগিয়ে দু’দেশের বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গতিশীলতা আনয়নে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) রাষ্ট্রদূত সাব্বির আহমেদ চৌধুরী অর্থনৈতিক মুক্তিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মুল লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি তাঁর বক্তব্যে ফুড প্রসেসিং, কৃষি, প্রযুক্তি, ব্লু ইকোনমি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র বের করে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার আহ্বান জানান।

ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান জিয়ানপাওলো নেরি, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ়তর করতে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্র, সম্ভাবনা ও সুযোগ-সুবিধাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে দু’দেশের মধ্যে একটি ‘বিজনেস কাউন্সিল’ গঠনের উপর গুরুত্ব দেন।

দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে ইতালির বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের নেতারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে একযোগে কাজ করবেন বলে জানান। টেক্সটাইল, চামড়া শিল্প, নবায়নযোগ্য শক্তি, কৃষি এবং ফুড প্রসেসিং, ফুড রিটেলিং এবং বেকারি, আইসিটি, সিরামিকস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট এবং পাটজাত পণ্য, সোলার মডিউল, সুনীল অর্থনীতি, রোবোটিকস, স্বাস্থ্য সেবা খাতের যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতসমূহকে দু’দেশের সহযোগিতার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিভাগের মহাপরিচালক, ইপিবির মহাপরিচালক, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বেসিস, এলএফএমইএবি, এপেক্স, ফুটওয়্যারের প্রেসিডেন্ট এবং ওয়াল্টন, ই-ক্যাবের প্রতিনিধিরা এবং ইতালির পক্ষে নিউ দিল্লিতে অবস্থিত ইতালির দূতাবাসের ট্রেড কমিশনার, ইটা, কনফিন্ডাস্ট্রিয়া, এআইসিই, রিফলাইন, এনি, মাগালদি পাওয়ার, ডিএম ইটালিয়ার প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন। নেপোলি ও ফ্লোরেন্স এ বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেলরাও আলোচনায় অংশ নেন।

দুই দেশের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা আলোচনায় তুলে ধরেন যা একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। ইতালির পক্ষে এনি, লিওনার্দো, মাগালধি পাওয়ার, রিফলাইন, ব্রাচি, ইডিওজি, ডিএম ইটালিয়া, এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিজিএমইএ, এপেক্স, ওয়ালটনের প্রতিনিধিরা তাদের আশাবাদ এবং নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। হাইব্রিড ফরমেটে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সবাই একমত হন যে, এটি দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। অনুষ্ঠানটির উপরে একটি ‘মিট দ্যা প্রেস’ আয়োজন করে যেখানে ইতালি ও ঢাকা থেকে অনেক সাংবাদিক যোগদান করেন।

উল্লেখ্য, ইতালি-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ইতালি বাংলাদেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘ঈদের আগে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলবে না’
পরবর্তী নিবন্ধঢাবি ‘গ’ ইউনিটে ভর্তির ফল প্রকাশ, পাসের হার ১৪.৩০