টানা পতনের মধ্যেই শেয়ারবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এতে দুই বাজারেই কমেছে মূল্যসূচক। তবে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।

মূল্যসূচক ও লেনদেন কমার পাশাপাশি প্রধান শেয়ারাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তিন ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য পড়ে। লেনদেনের প্রায় পুরো সময় এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য অবস্থায় থাকে। এতে দিনের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, এদিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরুর নয় মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ১৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়।

তবে লেনদেনের শুরু থেকেই পতনের তালিকায় নাম লেখায় মূল্য সূচকে সব থেকে বড় প্রভাব রাখা গ্রামীণফোন। লেনদেন শুরু হতেই এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম দিনের সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যায়।

এর আগে ভয়েস কল ও ইন্টারনেট সংযোগে গ্রাহকদের ‘মানসম্মত সেবা দিতে না পারার’ কারণ দেখিয়ে গত বুধবার (২৯ জুন) গ্রামীণফোনের নতুন সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় বিটিআরসি।

এরপর বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই দিনের সর্বনিম্ন দামে কোম্পানিটির বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রির আদেশ আসতে থাকে। অন্যদিকে শূন্য হয়ে যায় ক্রয় আদেশের ঘর। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ২৯৪ টাকা ১০ পয়সা। চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারও দিনের সর্বনিম্ন দামে লেনদেন হয় এই কোম্পানিটির শেয়ার।

আগের দুই কার্যদিবসের মতো সোমবারও লেনদেন শুরু হতেই দিনের সর্বনিম্ন দামে গ্রামীণফোনের বিপুল শেয়ার বিক্রির চাপ আসে। এতে লেনদেনের শুরুতেই দাম কমার সর্বনিম্ন সীমায় চলে যায় কোম্পানিটির শেয়ার। অন্যদিকে শূন্য হয়ে পড়েছে কোম্পানিটির শেয়ার ক্রয় আদেশের ঘর। যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। এতে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমে ২৮২ টাকা ৬০ পয়সায় চলে এসেছে।

গ্রামীণফোনের শেয়ারের এই দাম কমার প্রভাব পড়ে সার্বিক শেয়ারবাজারে। ফলে লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভারি হতে থাকে পতনের তালিকা। অবশ্য এর মধ্যেও তালিকাভুক্ত আর এক মোবাইল ফোন অপারেটর রবি’র শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়েছে।

লেনদেনের প্রায় সম্পূর্ণ সময় জুড়েই রবির শেয়ার দিনের সর্বোচ্চ দামে লেনদেন হয়েছে। এরপরও যাদের কাছে কোম্পানিটির শেয়ার আছে তাদের বড় অংশ কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করতে চাননি। ফলে দিনের সর্বোচ্চ দামে বিপুল শেয়ার কেনার আদেশ আসলেও বিক্রি আদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকে।

দুই মোবাইল ফোন অপারেটরের শেয়ার দামের দুই চিত্রের দিনে ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া ১৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮২টির। আর ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখানো প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছয়টির শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়েছে। বিপরীতে ৩৯টির দাম দিনের সর্বনিম্ন পরিমাণ কমেছে।

এতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২৮৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৮৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

মূল্যসূচক কমলেও বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬৬২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬৫৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে রবির শেয়ার। কোম্পানিটির ২৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা শাহিনপুকুর সিরামিকের ২৪ কোটি ২৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইন্ট্রাকো, বেক্সিমকো, ফরচুন সুজ, ফু-ওয়াং ফুড, তিতাস গ্যাস, এসিআই ফরমুলেশন এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি ৩৯ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৯১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৮টির এবং ৪০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১১ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৩ হাজার ৮১ কোটি ডলার
পরবর্তী নিবন্ধওয়ান ব্যাংক-যশোদা হসপিটালের মধ্যে চুক্তি সই