নিজস্ব প্রতিবেদক ; ঈদুল আযহার পঞ্চম দিন পেরিয়ে গেলেও রাজধানীতে মানুষের তেমন ভিড় নেই। বাজারে ক্রেতার সংখ্যা হাতেগোনা। তাই ক্রেতা-বিক্রেতাদের চিরচেনা সেই হাঁকডাক লক্ষ করা যায়নি। ফলে ক্রেতাশূন্য বাজারে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। তবে টমেটো, কাঁচা মরিচ ও শসার দাম বেড়েছে।
ঈদের পর রাজধানীর বাজারগুলোতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি করছেন ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। ঈদের আগে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে।
কাঁচা মরিচের দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. আলামিন বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কাঁচা মরিচের ক্ষেতের বেশ ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া ঈদের প্রভাবে বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহও কম রয়েছে। সবকিছু মিলেই দাম বেড়েছে।
কলতা বাজারের এর ব্যবসায়ী সাদ্দাম বলেন, ঈদের আগে এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচ ৩০ টাকায় বিক্রি করেছি। গতকাল শুক্রবার ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছি।
ঈদের পর দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ডিম। ঈদের আগে ১২৫ টাকা বিক্রি হওয়া এক ডজন ডিম এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। আর বিভিন্ন মুদি দোকানে এক পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা।
ডিমের দামের বিষয়ে পাঁচ ভাই ঘাট লেন ব্যবসায়ী নাজমুল বলেন, ঈদের আগের দিন থেকে ডিমের দাম বাড়তি।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ঈদের আগের চেয়ে কিছুটা কমে সবজি বিক্রি করছে। এক কেজি গাজর কিনতে ক্রেতাদের ১৮০ থেকে ২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। ঈদের আগে গাজরের কেজি ছিল ১২০ থেকে ১৬০ টাকা।
গাজরের মতো দাম বেড়েছে পাকা টমেটোরও। এক কেজি পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। ঈদের আগে পাকা টমেটোর কেজি ছিলো ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
গাজর ও টমেটোর দামের বিষয়ে কলতা বাজারে ব্যবসায়ী বলেন, গাজর ও টমেটোর এখন অনেক দাম। এ কারণে এখন কেউ এই দুটি পণ্য কেজি ধরে কিনছেন না। বেশিরভাগ ক্রেতা এক পোয়া করে কিনছেন। পাইকারিতে যে দাম তাতে এক পোয়া গাজর ৫০ টাকা এবং টমেটো ৪০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব না। তবে আধা কেজি নিলে ৫ টাকা কম রাখা যাবে।
গাজর ও টমেটোর পাশাপাশি দাম কিছুটা বেড়েছে বরবটি, বেগুন, কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কাঁচা পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
এদিকে ঈদের পর পটল ও ঢেঁড়শের দাম কিছুটা কমেছে। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ঢেঁড়শের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে, যা ঈদের আগে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
এছাড়া করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙে, চিচিঙ্গার কেজিও ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
কাঁচা মরিচের দাম বাড়লেও অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। আর আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। আলুও ঈদের আগের মতো ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, যা ঈদের আগে ছিল ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা।
মুরগির দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী মো. মিলন বলেন, মুরগি এখন খুব কম বিক্রি হচ্ছে। আবার বাজারে মুরগির সরবরাহও কম। অল্প কিছু মুরগি বাজারে আসছে। চাহিদা কম থাকলেও পাইকারিতে মুরগির দাম বেশি। আর বেশি দামে কেনার কারণে আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি। আমাদের ধারণা সামনে মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে।
মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৬০ টাকা। শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। কৈ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, পাবদা মাছ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঈদের পর এসব মাছের দামে পরিবর্তন আসেনি।
দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ইলিশেরও। এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। আর ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা। রায়সাবাজারে বাজার করতে আসা জাকির বলেন, ‘সবজির দাম বেশ কমই মনে হলো, তবে কাঁচা মরিচের দাম এখনো কমেনি উল্টো আরো বেড়েছে । মানুষজন এখনো ঢাকায় না ফেরার ফলে হয়তো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিছুটা কম আছে। তবে মানুষজন বাড়লে ও চাহিদা বেড়ে গেলে দু-একদিন পরেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেবেন।
