নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে পবিত্র ঈদুল আজহার পর সাত কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। সাত কার্যদিবসই দর পতন হয়েছে। গতকাল বুধবারও শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। কমেছে অধিকাংশ কোম্পানি ও ইউনিটির দর। তবে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। এদিন লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় দেড় শতাধিক কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করার মতো বিনিয়োগকারী থাকলেও ছিল না ক্রেতা। শেয়াজবাজারের এমন পতনের কারণ বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক। বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও ব্যয় কমানোর জন্য সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ বিনিয়োগকারীদের চিন্তিত করে তুলেছে। দেশের অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে শঙ্কায় শেয়ার বিক্রি করছেন তারা। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনীতিতে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাংলাদেশ সঠিক পথেই এগিয়ে চলছে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এবিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বাজার সামনে ঘুরে দাঁড়াবে ভয়ের কোন কারন নেই। বছরের বাজার কয়েক বার ফল্ট করে আবার ঠিক হয়ে যায়। কারণে শেয়ারবাজারে যে পতন হচ্ছে ততটা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আমাদের স্পেকিউলেটিভ মার্কেট, যার কারণে যে কোনো কিছু হলে শেয়ার মার্কেটের ওপরে দিয়ে যায়।
তিনি বলেন, বাজারে বিনিয়োগকারীরা আসলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছুদিন পরে আবার অনেকেই চলে আসবে তখন সব ঠিক হয়ে গেছে। তখন মনে হবে রিজার্ভ-টিজার্ভ সব ঠিক হয়ে গেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যে দেশে কোনো ইমপোর্ট হয়নি। দেশের বাইরে কেউ যায়নি। কলকাতায় প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে লোক যায়, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক যায়। করোনার মধ্যে কোনো জায়গাতেই যায়নি। ট্যুর-ট্রাভেলস সব বন্ধ ছিল। রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্টের মাধ্যমে ডলার যা এসেছে সব রিজার্ভে জমেছে।
এখন ইমপোর্ট হচ্ছে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ। রিজার্ভ তো কমবেই। এবিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্সঅ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারটা টোটালটা গেমলার নির্ভর মার্কেট এটা হওয়া উচিত ছিলনা। শেয়ারবাজারে প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব রয়েছে। সে কারনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কে পড়েছে। এই আতঙ্কের কারনে শেয়ার বিক্রির মহোৎসবে মেতেছেন বিনিয়োগকারীরা। হাফিজ আরও বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের প্রভাব কিছুটা পরেছে শেয়ারবাজারে। হাফিজ বলেন, আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ না। আশাকরি বাজার সামনে ভালো হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি ডিএসই সিএসই মার্চেন্ট ব্যাংক একসাথে কাজ করলে সামনে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দরপতন হয়েছে। দুই বাজারেই লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। পাশাপাশি কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
এর মাধ্যমে ঈদের পর লেনদেন হওয়া সাত কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। ঈদের আগেও পতনের মধ্যে ছিল শেয়ারবাজার। ঈদের আগে শেষ পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিনদিনই পতন দিয়ে পার হয়। সবমিলিয়ে শেষ ১২ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ দিনই পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার।
গতকাল লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে যায়। অবশ্য প্রথম ১৫ মিনিটের লেনদেন শেষ হওয়ার পর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। এতে লেনদেনের আধাঘণ্টার মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। অবশ্য সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। প্রথম আধাঘণ্টার লেনদেন শেষ হওয়ার পর আগের দুই কার্যদিবসের মতো দিনের সর্বনিম্ন দামে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রির আদেশ আসতে থাকে। ফলে ঋণাত্মক হয়ে পড়ে সূচক।
তবে কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা ফেরায় দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে শতাধিক প্রতিষ্ঠান। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১১০টি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২১৮টির এবং ৫৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ১৩৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২০৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় এক পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৪৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
মূল্যসূচক কমলেও বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬৬৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৩১৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৩৪৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৫২ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালী পেপারের ৪২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইন্ট্রাকো।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ইনফিউশন, কেডিএস এক্সেসরিজ, ফু-ওয়াং ফুড, শাইনপুকুর সিরামিকস, তিতাস গ্যাস, ফরচুন সুজ এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৩৮ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৮৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৫টির এবং ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।