নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবস পতন হলেও সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ব্যাপক উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারের সব সূচক বেড়েছে। সূচকের সাথে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর এবং টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে। গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার উপরে হয়েছে। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি ডিএসইতে ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর গত সাত মাসে ডিএসইতে আর এতো লেনদেন হয়নি। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। সে জন্য লেনদেনর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সূচক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শেয়ারবাজারে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ওষুধ, প্রকৌশল, খাদ্য, বস্ত্রসহ সবকটি খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে। এদিন ডিএসই ছাড়াও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু হয়। প্রথম আধাঘণ্টার লেনদেনে ডিএসইতে ৬৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। ফলে লেনদেনের শুরুর দিকে সূচকের বড় উত্থানের আভাস পাওয়া যায়। আর লেনদেনের শেষদিকে এসে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরও বেড়ে যায়। ফলে সূচকের বড় উত্থান দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ২৩৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৪টির। আর ৯১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিলেও বড় দাপট দেখিয়েছে বিমা খাতে। এ খাতের ৪৬টি কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে একটি প্রতিষ্ঠানেরও শেয়ার দাম কমেনি। তবে ৬টির শেয়ার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া ওষুধ খাতের ২০টির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ৪টির। ব্যাংক খাতের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে ৩টির। আর্থিক খাতের ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ২টির। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ৩টির। প্রকৌশল খাতের ৩৫টির শেয়ার দাম বেড়েছে এবং ৬টির দাম কমেছে। খাদ্য খাতের ১২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ৪টির।
এতে দিনের লেনদেশ শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৭৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৫৫ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ২৩ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২৬৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৭৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ১৩৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৬৪৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। একইসঙ্গে ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হয়েছে। গত ১১ জানুয়ারি ডিএসইতে ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর গত সাত মাসে ডিএসইতে আর এতো লেনদেন হয়নি।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার। কোম্পানিটির ১০৮ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরচুন সুজের ১০৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৯৭ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেক্সিমকো। লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- অরিয়ন ফার্মা, ফরচুন সুজ, বেক্সিমকো লিঃ, আইপিডিসি, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, লাফার্জ হোলসিম, ইস্টার্ন হাউজিং লিঃ, সামিট এলায়েন্স পোর্ট, মালেক স্পিনিং ও ম্যাকসন স্পিনিং।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- ন্যাশনাল হাইজিং, অরিয়ন ইনফিউশনস, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, জিকিউ বলপেন, ইস্টার্ন হাউজিং লিঃ, হাক্কানী পাল্প, মেট্রো স্পিনিং, আরএসআরএম স্টিল ও ফনিক্স ফাইন্যান্স।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- সোনারগাঁও টেক্সটাইল, সেন্ট্রাল ফার্মা, এমারেল্ড অয়েল, এস আলম কোল্ড রোল্ড, সাফকো স্পিনিং, দুলামিয়া কটন, বিডি থাই ফুড, এফবিএফআইএফ, তসরিফা ইন্ডাঃ ও আইএফআইসি ১ম মি. ফা.।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৩৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ৩১২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭০টির এবং ৭৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।