অর্থনীতি ডেস্ক : বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক অব রিকন্সট্রাকশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (আইবিআরডি) এর অতিরিক্ত শেয়ারের বাৎসরিক সদস্য ফি হিসেবে বাংলাদেশের ৫৪ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। টাকার মানে বড় ধরনের অবনতি হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অতিরিক্ত প্রায় ৭ কোটি টাকা চেয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
এ বিষয়ে ইআরডি থেকে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চেয়ে অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ইআরডি’র একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অন্য ভাবে বলতে গেলে এ বছর ৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলারের দেনা পরিশোধ করতে বাংলাদেশকে চড়া দামে ডলার কিনতে হবে।
ইআরডি থেকে গত সপ্তাহে ৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলারের বকেয়া পরিশোধে অতিরিক্ত অর্থ চেয়ে অর্থ বিভাগের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। এখন দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ৯৭ দশমিক ৫০ টাকায় মার্কিন ডলার লেনদেন হচ্ছে। এখাতে যখন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তখন ডলারের দাম ছিল ৮৫ দশমিক ৫০ টাকা। প্রতি ডলারে দাম বেড়েছে ১২ টাকা।
অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সাধারণত বাংলাদেশ সরকার বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের মাধ্যমে পরিচালিত আইবিআরডি-এর মতো আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের বর্ধিত শেয়ার মূল্য পরিশোধে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অর্থ বিভাগকে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে, আইবিআরডিতে বাংলাদেশের বর্ধিত অংশের চাহিদা মেটাতে সরকার একটি বিশেষ কর্মসূচি তহবিলে ৪৬ দশমিক ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
২০১৮ সালে, বাংলাদেশ সরকার আইবিআরডির মূলধনের সাধারণ এবং নির্বাচনী ক্যাটাগরির অধীনে বাংলাদেশের অংশ বাড়িয়ে ১,৪১৬ করতে সম্মত হয়েছে। ২১ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ৯১৩টি শেয়ারের মূল্য ইতিমধ্যেই পরিশোধ করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৫০৩টি শেয়ারের জন্য এখন ৫ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মার্কিন ডলারের দাম বাড়ার কারণে সরকারের ওপর সৃষ্ট অতিরিক্ত চাপ সামলাতে অতিরিক্ত তহবিল যোগাড় করতে হবে। দেশে যে কেবল মার্কিন ডলারের মূল্যই বেড়েছে তা নয়, উন্নয়ন প্রকল্পের পরিমাণ এবং ব্যয়ও বাড়ছে।
ইআরডি সূত্রে জানা যায়, আইবিআরডির ২০১৮ জেনারেল ক্যাপিটাল ইনক্রিজ (জিসিআই) এর আওতায় ৬৫৫টি এবং সেসেকটিভ ক্যাপিটাল ইনক্রিজ (এসসিআই) এর আওতায় ৭৬১টি শেয়ার বৃদ্ধিতে বংলাদেশ সম্মতি দেয়। প্রতিটি শেয়ারের দাম ৭৯,০১৫,৯২৫ মার্কিন ডলার। তারমধ্যে ২০ শতাংশ পেইড ইন পরশন হিসেবে ১৫,৮০৩,১৮৫ মার্কিন ডলার এবং এসসিআই এ আওতায় বৃদ্ধি প্রাপ্ত ৭৬১টি শেয়ারের মোট দাম ৯১,৮০৩,২৩৫ মার্কিন ডলার; তারমধ্যে ৬ শতাংশ পেইড ইন পরশন হিসেবে ৫,৫০৮,১৯৪.১০ মার্কিন ডলারসহ সর্বমোট ১৪১৬টি অতিরিক্ত শেয়ারের জন্য পেইড ইন পরশন হিসেবে ২,১৩১১,৩৭৯.১০ মার্কিন ডলার আগামী ২০২৩ সালের ১ অক্টোবরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০১৯-২০২০, ২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২ অর্থবছর মোট ১৩৫ কোটি টাকা পেইড ইন পরশন হিসাবে ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ জিসিআই-এর ৫৪৮টি এবং এসসিআইর ৩৬৫টি শেয়ার পেয়েছে। আইবিআরডি-এর জিসিআই এ অবশিষ্ট ১০৭টি শেয়ারের বিপরীতে ২৫,৭৪,৬৫৬.৬৫ মার্কিন ডলার এবং এসিআইর অবিশষ্ট ৩৯৬টি শেয়ারের বিপরীতে ২৮,৬১,১৩৫.২৮ মার্কিন ডলারসহ মোট ৫৪,৩৫,৭৯১.৯৩ মার্কিন ডলার চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত প্রায় সাত কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি অর্থ বিভাগে অবহিত করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।