সপ্তাহ ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার উপরে


নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের যতোদিন যাচ্ছে ততই আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে ৫ কার্যদিবসই ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এতে সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মূল্যসূচক। এতে এক সপ্তাহ ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার উপরে। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশের আর্থনীতি অবস্থায় বেশ ভালো সে জন্য শেয়ারবাজার ভালো হচ্ছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ উভয় শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হওয়ায় শেয়ারবাজারে লেনদেনের পালে হাওয়া লেগেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই শেয়ারবাজার চাঙ্গা হচ্ছে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৮ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। আগের দুই সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ৯ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। এ হিসাবে তিন সপ্তাহের উত্থানে বাজার মূলধন বাড়লো ১৮ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা।

বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৩টির। আর ৫৬টির দাম অপরিবর্তিত। এতে গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়ছে ১৫৩ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১১৩ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮২ শতাংশ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১১৩ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮২ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ৯২ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৩১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৪৭ দশমিক ৩০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ২৫ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৭ শতাংশ। প্রধান ও ডিএসই-৩০ মূল্যসূচকের পাশাপাশি বেড়েছে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক। গত সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ১৮ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২৪ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ২০ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

সবকটি সূচকের উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯০২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ৩৮৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়ছে ৫১৬ কোটি ১২ লাখ টাকা বা ৩৭ দশমিক ২২ শতাংশ। আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৯ হাজার ৫১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৬ হাজার ৯৩৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ২ হাজার ৫৮০ কোটি ৬১ লাখ টাকা বা ৩৭ দশমিক ২২ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৮২ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৬৩ কোটি ৮১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। ২৬৫ কোটি ৫০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।

এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মালেক স্পিনিং, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ইস্টার্ণ হাউজিং, ফরচুন সুজ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ম্যাকসন স্পিনিং এবং আইপিডিসি ফাইন্যান্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ২৭৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯০৪ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১৬৮ কোটি ৪৩ লাখ ৯৮ হাজার ১৮১ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ১১১ কোটি ০০ লাখ ৭৭ হাজার ৭২৩ টাকা বেড়েছে।

সপ্তাহটিতে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫১৩.২৪ পয়েন্ট বা ২.৭৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ১৫৬.২০ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসসিএক্স ৩০৮.৮১ পয়েন্ট বা ২.৭৬ শতাংশ, সিএসই-৩০ সূচক ৪১৯.২৯ পয়েন্ট বা ৩.১২ শতাংশ, সিএসই-৫০ সূচক ২৭.৮৯ পয়েন্ট বা ২.০৬ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ২৮.৯৬ পয়েন্ট বা ২.৪৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ৪৮০.৯৭ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৮৪৭.০১ পয়েন্টে, এক হাজার ৩৮৪.৬৮ পয়েন্টে এবং এক হাজার ২১৯.৪৮ পয়েন্টে।

সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৪০টির বা ৬৮.৭৭ শতাংশের দর বেড়েছে, ৬৯টির বা ১৯.৭৭ শতাংশের কমেছে এবং ৪০টির বা ১১.৪৬ শতাংশের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচড়া সবজির বাজার, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধদেশের জুয়েলারি খাতে বিনিয়োগ করবে আরও ২ ভারতীয় কোম্পানি