নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সোমবারও দর পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এই নিয়ে দুই কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। সোমবার শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিন প্রকৌশল, ব্যাংক এবং আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে বড় দরপতন থেকে রক্ষা পেয়েছে শেয়ারবাজার। এদিন প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচক কমেছে ৯ পয়েন্ট। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৬১ পয়েন্ট। এদিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রির চাপের মধ্যদিয়ে লেনদেন শুরু হয়। তবে লেনদেনের প্রথম ঘণ্টায় ক্রেতা-বিক্রেতার সংকট ছিল না। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা সংকট দেখা দেয়। অবস্থা এমন হয় যে অন্তত ৬২টি কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতা ছিল না। তবে বাজারের চিত্র পাল্টে যায় ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং প্রকৌশল খাতের শেয়ারের চমকে। এদিন প্রকৌশল খাতের ৪২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টির দাম বেড়েছে, কমেছে ১৩টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। আর্থিক খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩টির, কমেছে ৩টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
এছাড়াও ব্যাংক খাতের ৩৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১২টির, কমেছে ৪টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭ কোম্পানির শেয়ারের দাম। এই তিন খাতের শেয়ারের দাম বাড়ায় বড় দরপতন থেকে রক্ষা পেয়েছে শেয়ারবাজার।
এদিকে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক ও লেনদেন কমলো। এর আগে গত সপ্তাহসহ টানা চার সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকে শেয়ারবাজার। চার সপ্তাহের টানা উত্থানে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৪১১ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন বাড়ে ১৯ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এমন টানা উত্থানের পর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেনের শুরুতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়লেও শেষ পর্যন্ত দরপতনের তালিকা বড় হয়। সোমবারও লেনদেনের প্রথমদিকে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। ফলে লেনদেনের প্রথম একঘণ্টা সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকে। অবশ্য লেনদেনের শুরু থেকেই দাম কমতে থাকে ভালো কোম্পানি হিসেবে ডিএসইর বাছাই করা প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের, যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। ফলে সবকটি সূচকের পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১২৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৫টির এবং ১৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৯ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৫২৮ পয়েন্টে নেমে গেছে।
প্রধান মূল্যসূচকের তুলনায় বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকের পতন বেশি হয়েছে। এই সূচকটি আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৩৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪২৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচকের পতনের সঙ্গে ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৬০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৬৯১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ৩৩০ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১৯৭ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার ১৫৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৫৭ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন।
লনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- বেক্সিমকো লিঃ, অরিয়ন ফার্মা, বিএসসি, জেএমআই হসপিটাল, নাহী অ্যালুমিনিয়াম, লাফার্জহোলসিম, শাইনপুকুর সিরামিকস, ইস্টার্ন হাউজিং, আইএফআইসি ও অরিয়ন ইনফিউশন।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- জেএমআই হসপিটাল, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মনোস্পুল পেপার, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এসআলম কোল্ড রোল্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স, পেপার প্রসেসিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও অ্যাপেক্স ফুডস।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- সোনারগাঁ টেক্সটাইল, অরিয়ন ফার্মা, ইস্টার্ন হাউজিং, শাইনপুকুর সিরামিকস, ইয়াকিন পলিমার, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফু-ওয়াং সিরামিক, ওয়াটা কেমিক্যাল, বেক্সিমকো ফার্মা ও লিগাসী ফুটওয়ার।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৯১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮১টির এবং ১০০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।