জিডিপি প্রবৃদ্ধি চার শতাংশের নিচে নামার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের বর্তমান প্রবৃদ্ধির কাঠামো টেকসই নয়। নতুন করে সংস্কার না হলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ২০৩৫ থেকে ২০৩৯ সালের মধ্যে চার শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিশ্বব্যাংকের ‘চেঞ্জ অব ফেব্রিক’ প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে এ কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের শীর্ষ প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর মতো বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধির কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির জন্য তিনটি বাধা চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। এগুলো হলো- বাণিজ্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস, দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক খাত এবং ভারসাম্যহীন ও অপর্যাপ্ত নগরায়ন। এই তিন বাধা দূর করতে পারলে উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে এবং ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধিও টেকসই হবে। এছাড়া ২০৩১ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের নিচে নেমে এলে সরকারের লক্ষ্য পূরণে অতিরিক্ত দুই বছর সময় প্রয়োজন হবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কয়েক দশক ধরে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি সেরা প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশগুলোর একটি হলো বাংলাদেশ। কিন্তু এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কারণ নেই। অর্থনীতির তেজিভাব কখনো স্থায়ী প্রবণতা নয়। দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি সব সময় উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। তবে কয়েকটি দেশ দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। শীর্ষ ১০-এ থাকা দেশগুলোর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ দেশ পরের দশকেও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত এক দশকে (২০১০-১৯) যেসব দেশ শীর্ষ ১০-এ ছিল, সেসব দেশ আগের দশকে এ স্থানে ছিল না।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিশ্বব্যাংকের সুপারিশে বলা হয়, রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশের শুল্ক-করহার অন্য দেশের তুলনায় বেশি, যে কারণে বাণিজ্য সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ব্যাংক খাত সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংক খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। কিন্তু দেশের আর্থিক খাত অতটা গভীর নয়। গত চার দশকে আর্থিক খাতের উন্নতি হলেও এখনো তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া আধুনিক নগরায়নই বাংলাদেশের পরবর্তী ধাপের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভারসাম্যপূর্ণ আধুনিক নগরায়নের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

আয়োজনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ডানডান চেন। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আলোচনা করেন বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ নোরা ডিহেল এবং প্রধান অর্থনৈতিক বিশ্লেষক জাহিদ হুসাইন। আলোচনা করেন সানেমের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অধ্যাপক সেলিম রায়হান এবং এসবিকে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া বাশার। সমাপনি বক্তব্য দেন বিশ্ব ব্যাংকের সাউথ এশিয়া জোনের প্র্যাকটিস ম্যানেজার হোন এস সোহ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান।

প্রধান অতিথির বক্তব্য পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, বন্ধু হিসেবে বিশ্বব্যাংক আমাদের বেশকিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। আমরা এই প্রতিবেদনের প্রস্তাবগুলো দেখবো; তারপর সেখান থেকে পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা নেবো। বিশেষ করে তারা কয়েকটি কথা বলেছে, যেমন আমরা কাপড়ের উপর নির্ভরশীল, ব্যাংকিং সেক্টরে আমাদের কিছু সমস্যা আছে। তবে আমাদের একটা লেভেল আছে এবং আমরা আরও উন্নতি করতে চাই। দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক কিছু সমস্যা আছে, এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং এর ফল আমরা হাতে হাতে পেয়েছি। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, খাদ্য ঘাটতি কমেছে, প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ গেছে, স্বাক্ষরতা বেড়েছে। সারা বাংলাদেশে এপার থেকে ওপারে যাবেন, একটা ফেরি পার হতে হবে না। এগুলো কি চিন্তা করার মতো বিষয় নয়? সুতরাং যেসব বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বলেছে, আমরা তা করছি এবং চালিয়ে যাবো।

এম. এ. মান্নান আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা বলেছে। এটা ঠিক যে আকাশে কালো মেঘ আমরা দেখতে পারছি। তবে আমরা আশা করি যে এই কালো মেঘ থেকে ঝড় আসবে না। কেননা, ঝড় কারও জন্যই মঙ্গল হবে না। লাঠিসোটা দিয়ে দ্রব্যমূল্য বা মুদ্রাস্ফীতি কমানো যাবে না। এগুলোর জন্য কাজ করতে হবে, বসে আলোচনা করতে হবে। আমরা একটি বিশ্বমানের রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে চাই এবং সেই বিবেচনায় আমাদের বিশ্বমানের আচরণে গড়ে উঠতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩-১৩ অক্টোবর বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালন করবে বিএসইসি
পরবর্তী নিবন্ধদুর্গাপূজায় জঙ্গি হামলার ঝুঁকি আছে: ডিএমপি কমিশনার