নিউজ ডেস্ক : দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রধান সমস্যা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যার ফলে আয় না বাড়লেও বেড়েছে ব্যয়। তার ওপর বিদ্যুতের ঘাটতি চরম আকার ধারণ করেছে, দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি।
মূল্যস্ফীতি বলতে যেমন ধরুন গত মাসে একটি পণ্যের দাম ছিল ১০০ টাকা কিন্তু চলতি মাসে সেই পণ্যটি কিনেছেন ১৩০ টাকায়। বাড়তি ৩০ টাকা মূল্যস্ফীতি, ইংরেজিতে যাকে বলে ইনফ্লেশন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রতিমাসের মূল্যস্ফীতি জনসম্মুক্ষে প্রকাশ করে। চলতি বছরে মে মাসে ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, জুন মাসে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, জুলাই মাসে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। যা গত ১৯ জুলাই প্রকাশ করা হয়। কিন্তু অক্টোবর মাস শেষ হয়ে গেলেও গত দুই মাসের পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়নি। সবুজ আন্দোলন তথ্য ও গবেষণা পরিষদ একটি পরিসংখ্যান চালিয়ে গত দুই মাসে ১০০ জন সাধারণ মানুষ এবং দোকানির সঙ্গে কথা বলে ডাটা তৈরির মাধ্যমে একটি ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছে। সেখানে দেখা গেছে দেশে চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে দারুস-সালাম আর্কের্ডের ৭ম তলায় পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের উদ্যোগে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, বিদ্যুতের ঘাটতি, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিতে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভার আলোচকরা এসব কথা বলেন।
সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালন পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদারের সভাপতিত্বে বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর, পরিবেশ বিজ্ঞানী বিএআরডির পরিচালক ড. ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হামিদ, সেন্টার ফর গ্লোবাল এনভাইরনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী আব্দুল ওহাব।
আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা প্রত্যাশার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন, এসএমই ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলি জামান।
বাপ্পী সরদার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের অস্থিতিশীলতা মূল্যস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ। আমরা আপনাদেরকে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যস্ফীতির একটি চিত্র তুলে ধরছি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ৮ শতাংশ, চীনে ৩ শতাংশ, ইংল্যান্ডে ৬ শতাংশ, ইউরোপের ১৯টি রাষ্ট্রে ৫.৫০ শতাংশ, জার্মানিতে প্রায় ৫ শতাংশ, জাপানে ২ শতাংশের কাছাকাছি। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে প্রায় ৬ শতাংশ আর পাকিস্তানের ১৫ শতাংশের বেশি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে তেল উৎপাদনকারী সব দেশ অধিক মুনাফার জন্য চাহিদার তুলনায় কম তেল উৎপাদন করছে, যাতে করে আগামীতে অধিক মুনাফা করতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণসমূহ চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন কম, সরবরাহ ব্যবস্থায় সিন্ডিকেট প্রথা, পরিবহন সংকট (সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে), শ্রমিক ঘাটতি, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, চীনের খাদ্যবাজারে অস্থিতিশীলতা, উন্নত রাষ্ট্রগুলোর আগ্রাসি মনোভাব।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ, ডিজেল লিটারে ২৯ টাকা, অকটেন ৪৬ টাকা, পেট্রোল ৪৪ টাকা। পেঁয়াজ ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা, ডিম ১১০ থেকে ১৫০ টাকা, সব মাছের দাম কেজিতে ৩০ টাকার বেশি, চাল ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা। বিগত দুই মাসে এভাবে সব পণ্যের দাম বেড়েছে প্রায় শতকরা ২০ ভাগের বেশি।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সবুজ আন্দোলনের পরিচালক অভিনেতা উদয় খান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের অর্থ সম্পাদক আলমগীর হোসেন পলাশ, কেন্দ্রীয় সদস্য জামিল আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি সেলিনা চৌধুরী, ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি এম আলম রাইন প্রমুখ।