তামাকপণ্যে শুল্ক বাড়ানো হবে কি না জানতে চায় আইএমএফ

নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তামাকজাতপণ্যে শুল্ক বাড়ানোর পাশাপাশি প্রান্তিক করদাতার ওপর করের হার বাড়ানো ও রাজস্ব বাড়ানোর জন্য শুল্কের হার কমানো হবে কি না জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে, বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় করের বোঝা না বাড়িয়ে করজাল বাড়ানোর কথা আইএমএফকে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

রোববার (৩০ অক্টোবর) রাজস্ব ভবনে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ তথ্য জানতে চেয়েছে আএমএফ প্রতিনিধিদল।

বৈঠক শেষে রাজস্ব ভবন থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় প্রতিনিধিদলের কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেনি। তার কিছুক্ষণ পরেই বেরিয়ে যান রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, তিনিও বৈঠক সম্পর্কে কিছু জানাননি। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সৈজন্য সাক্ষাৎ করলেও কোনো বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান।

জানা গেছে— দুপুরে সেগুনবাগিচায় রাজস্ব বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস পলিসির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আইএমএফের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল। অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চাইছে বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে আইএমএফের একটি দল এখন ঢাকায়। দলটি গত বুধবার (২৬ অক্টোবর) থেকে আগামী ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে। আইএমএফের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর প্রধান রাহুল আনন্দ দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে— কর থেকে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) অনুপাত বৃদ্ধি, কর ও ভ্যাট থেকে অব্যাহতি প্রত্যাহার, তামাকের ওপর করের হার বাড়ানো, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে শুল্ক কমানো, ডিজিটালাইজেশন, কাস্টমস ও কর আইনসহ প্রায় ডজনখানেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদল বর্তমানে তামাকপণ্যে শুল্ক হার ও তামাক থেকে কি পরিমাণ রাজস্ব আসছে তা জানতে চায়। এ সময় আইএমএফকে জানানো হয়— নিম্নস্তর ৫৭ শতাংশ, মধ্যম স্তর, উচ্চস্তর ও প্রিমিয়াম স্তরে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান আছে। জর্দা ও গুলে ৫৫ শতাংশ ও বিড়িতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান।

আইএমএফকে আরও জানানো হয় হয়, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সিগারেট থেকে ৩৩১২ কোটি, বিড়ি থেকে ১৭৮ কোটি, জর্দা থেকে ৭ কোটি ও গুল থেকে দেড় কোটি টাকার শুল্ক আদায় করেছে। এর মধ্যে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে সিগারেট থেকে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, বিড়িতে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ ও জর্দায় ২৮ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন মূসক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) মাধ্যমে ভ্যাট আদায় বাড়ানোর পরিকল্পনার বিষয়ে আইএমএফকে জানানো হয়েছে। দেশীয় শিল্প রক্ষার্থে যেসব পণ্যের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে বলে আইএমএফকে জানানো হয়।

সিগারেটের ওপর ব্যবহার কমানো হবে কি না তা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা আইএমএফকে বলেছি— শুল্ক বাড়ানো কোনো সমাধান না। শুল্ক বাড়লে চোরাচালান বাড়বে। সিগারেটে এখন শুল্ক অনেক বেশি, ১০০ টাকার মধ্যে ৭০ টাকার ওপর কোম্পানিকে শুল্ক, কর দিতে হচ্ছে। তাদের প্রোডাক্টশন কস্ট ও অন্যান্য খরচ আছে। শুল্ক বাড়ালে সিগারেটের চোরচালান হবে। এরই মধ্যে সিগারেটের চোরাচালান বেড়েছে। শুল্ক বাড়ালে যে ব্যবহার কমে যাবে বিষয়টি তেমন না।

এনবিআরের আরেক কর্মকর্তা বলেন, অর্থনৈতিক ও রাজস্বখাতে সংস্কার বিষয়ে বিস্তার আলোচনা হয়েছে। রাজস্বখাতের সংস্কারে এনবিআরের ভূমিকার পাশাপাশি আইএমএফের প্রতিনিধিরা ব্যক্তি ও ব্যবসায় পর্যায়ে করহার বাড়ানো ও দেশীয় শিল্পে কর সুবিধা উঠিয়ে কর বাড়ানোর বিষয় জানতে চান। এ বিষয়ে আইএমএফকে বলেছি— কর হার বাড়ানোর পক্ষপাতি না। কারো ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দিতে চাই না। করজাল বাড়ানো ও নতুন করদাতাদের কাছ থেকে বেশি নেওয়া হচ্ছে কি না তা জানতে চায় প্রতিনিধিদল।

এ প্রসঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধিরা জানান, মূল্যস্ফীতি যা আছে সেগুলো বিবেচনা করে মার্জিনাল ট্যাক্সপেয়ারদের কাছ থেকে ট্যাক্স বাড়াবো না।

আয়কর কীভাবে বাড়বে জানতে চাইলে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, করদাতারা যেনো সহজে কর দিতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি করছি। যারা কর ফাঁকি দিচ্ছে বিভিন্ন সেক্টরে সেটা কমানোর চেষ্টা করছি। যারা নিয়মিত করফাঁকির জায়গাগুলো কমানোর চেষ্টা করবো।

রাজস্ব বোর্ডের নেওয়া বিদ্যমান কর্মকৌশলে কোনো সফলতা আসছে কি না জানতে চায় প্রতিনিধিদল। এনবিআরের পক্ষে থেকে প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়— গত চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে অর্থমন্ত্রণালয় আমাদের যে পরিমাণ গ্রোথের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে এর চেয়েও বেশি আদায় করেছি। আমরা সঠিক পথেই আছি। ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, অটোমেশন নিয়ে অগ্রগতি প্রসঙ্গে আএমএফকে জানানো হয়। বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে রাজস্ব বোর্ড। রাজস্ব বোর্ডের উত্তর শুনে আইএমএফ খুশি হয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরের পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনসহ (বিইআরসি) বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে আইএমএফ। দলটির সঙ্গে আগামী ৮ বা ৯ নভেম্বর শেষ বৈঠক করবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএডিস মশা ছিল না, হয়তো প্লেনে করে এসেছে: স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশি নাবিকদের দেশে উন্নত সুবিধা দেবে সরকার, ব্যয় ৬০ কোটি