নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থনৈতিক মন্দা থেকে আমরা যেন উত্তরণ ঘটাতে পারি সে বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সজাগ। আমাদের অর্থনীতি এখনো গতিশীল আছে, নিরাপদ আছে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সকালে যশোরে বিএএফ একাডেমিতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ ২০২২ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীর অবদান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রয়েছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা যখন পাকিস্তানি বন্দিখানা থেকে ফিরে আসেন, তার পর থেকেই তিনি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন। বিমান বাহিনীকে শক্তিশালী করতে যা যা প্রয়োজন, হেলিকপ্টার, বিমান, যুদ্ধ বিমান, এয়ার ডিফেন্স রাডার সব কিছুই তিনি সীমিত সম্পদ দিয়ে করে দিয়েছিলেন।
আমাদের দুর্ভাগ্য, জাতির পিতাকে হত্যার পর এ দেশে বারবার ক্যু হয়, বিমান বাহিনীর প্রায় ৬০০ কর্মকর্তা-সৈনিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পঁচাত্তরের পর থেকে ৯৬ পর্যন্ত নানা ঘটনা ঘটে। ৯৬ সালে ২১ বছর পরে আমরা সরকারে আসি এবং বিমান বাহিনীকে আবার নতুনভাবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা নিই, বলেন তিনি।
এ সময় বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ দুদফায় নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা এই একাডেমিতে একদিন বলেছিলেন, ইনশাল্লাহ এমন দিন আসবে আমাদের একাডেমির নাম শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নয়, সমগ্র দুনিয়াতে সমান সম্মান অর্জন করবে। আজকে আমরা দেখি অন্যান্য দেশ থেকেও আসছে, ট্রেনিং নিচ্ছে। যেমন নেপাল, ফিলিস্তিন, গাম্বিয়ার অফিসাররা এখানে এসেছেন।
নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের সরকার সব সময় বিমান বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক দক্ষতা এবং প্রশিক্ষণ-আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, শুধু অপারেশ ও প্রশিক্ষণই নয়, আমরা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী কল্যাণকর পদক্ষেপও নিয়েছি। আমি চাই, আমাদের ক্যাডেটদের জীবন সুন্দর হোক। আমরা যেন আমাদের ক্যাডেটদের নিয়ে গর্ব করতে পারি। শান্তিরক্ষা মিশনে আমরা কাজ করি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চলতে হয় তাই প্রশিক্ষণের ওপর সব থেকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রশিক্ষণ উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করে, এই কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবে। আমরা স্বাধীন দেশ। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবো, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
অনেক কাজ আমরা করে যাচ্ছিলাম। তবে কোডিভ-১৯ ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা, যার কারণে সারা বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিয়েছে। এই মন্দা থেকে আমরা যেন উত্তরণ ঘটাতে পারি সে বিষয়ে আমরা যথেষ্ট সজাগ। আমাদের অর্থনীতি এখনো গতিশীল আছে, নিরাপদ আছে সেটুকু অন্তত আমি বলতে পারি, বলেন শেখ হাসিনা।
নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, অনেক দেশে যখন দুর্ঘটনা-দুর্বিপাক হয় আমরা তাদের সহযোগিতা করি। আবার আমাদের দেশে ঝড়-বন্যা বা কোনো রকম দুর্ঘটনা ঘটে আমাদের বিমান বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জনগণের পাশে দাঁড়ায়। জনগণের সেবা করে, এটাই হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
যে কোনো একটা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য জনগণের আস্থা-বিশ্বাস একান্তভাবে দরকার। তাছাড়া আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়—এই নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি। তারপরও দক্ষতার দিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের সব ধরনের উৎকর্ষতা বজায় রেখে আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। দেশ মাতৃকার প্রতি ও দেশের জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তার ভাষণেও বলেছেন যে, দেশ ও দেশের জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। নবীন যারা আজকে কর্মস্থলে যোগ দেবে তাদের জন্য এই কথাটা প্রযোজ্য, বলেন তিনি।
এমএ