আশ্চর্যজনক ওভার ইনভয়েসিং, ১০০ এলসি বন্ধ করেছি: গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক : পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ার আড়ালে কীভাবে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে, তা নিয়ে আবারও কথা বললেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
তিনি বলেছেন, আশ্চর্যজনকভাবে দেখলাম, ২০-২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং (অতিরিক্ত মূল্য দেখানো) করে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এ রকম ১০০ এলসি বন্ধ করেছি আমরা। বৈদেশিক বাণিজ্যে পণ্যর দাম কম বা বেশি দেখিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ট্রেড বেজড মানি লন্ডারিং বন্ধ করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিআইডিএস আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার গভর্নরের বক্তব্যে অর্থ পাচারের প্রসঙ্গ আসে।
পণ্য আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং মানে হল অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংক চ্যানেলেই বিদেশে পাচার হচ্ছে। পণ্যের মূল্যের নামে পাঠানো অতিরিক্ত অর্থ পরে বিদেশে আমদানিকারকের পক্ষে কেউ গ্রহণ করছে। এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে আসছে। আন্ডার ইনভয়েসিং ব্যবহার করা হয় পণ্য রপ্তানিতে। পণ্য রপ্তানির সময়ে যে পরিমাণ অর্থ কম দেখানো হয়, তা বিদেশে রপ্তানিকারকের পক্ষে বুঝে নেওয়া হয়। এভাবেও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা বিভিন্ন সময়ে আলোচিত হয়ে আসছে। আমদানি-রপ্তানিতে এমন মিস ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বড় অংকের অর্থ পাচারের তথ্য উঠে আসছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণাতেও।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক তথ্যে দেখা যায়, ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মিস ইনভয়েসিং বা অস্বচ্ছ লেনদেনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৮০৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়টি বেশ আগে থেকে বলে আসছে। ডলারের সাম্প্রতিক সংকটের মধ্যে দেশ থেকে অর্থ পাচারের বিষয়টিও নতুন করে আলোচনায় আসছে।
গত ১৫ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারও বলেন, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য অতিরিক্ত দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মূল্য কম দেখানোর (আন্ডার ইনভয়েসিং) বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারী পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে বাড়তে থাকে পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খোলা এবং নিষ্পত্তির পরিমাণ। এ ধারা অব্যাহত থাকে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও।
আমদানি বাণিজ্য বৃদ্ধির বিপরীতে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স সেভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের চাপে পড়ে বাংলাদেশ। আমদানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের অগাস্টে থাকা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ নেমে এসেছে ৩৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়নে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোংলা বন্দরের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য আয়োজন
পরবর্তী নিবন্ধবিকাশ অ্যাপে ৫০ টাকা মোবাইল রিচার্জে ১৬ টাকা ক্যাশব্যাক