বিশ্বকাপের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্য-পর্যটনখাতে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শেষ হয়েছে দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ কিংবা ফুটবল বিশ্বকাপ। এবারের আসরে বিজয়ের মুকুট গিয়েছে ফুটবলের ক্ষুদে জাদুকর মেসির দল আর্জেন্টিনার হাতে। আর এ মহাযজ্ঞের মাধ্যমে কাতার প্রমাণ করেছে, মধ্যপ্রাচ্যও যেকোনো আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের সক্ষমতা রাখে।

অনেকের দাবি, এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট একটি দেশ কাতার শুধু আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেনি, বরং এ আয়োজনের ফলে খুলে গেছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের দুয়ার।

বিশ্বকাপ চলাকালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন তৌক বলেছিলেন, কোনো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা যে পর্যটন-বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন প্রতিভা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে, তা বাস্তবে দেখা গেলো।

ইনভেস্টোপিয়া ফিউচার অব স্পোর্টস সম্মেলনে কাতারের অর্থমন্ত্রী আলী বিন আহমেদ আল ক্বারী বলেন, বিশ্বকাপ ও দুবাই এক্সপো-২০২০ এর মতো বড় প্রতিযোগিতা মানুষকে এক ছাদের নিচে আনার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যকে বিশ্বের কাছে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে পারে।

তার মতে, ক্রীড়াখাতে বিনিয়োগ করলে পর্যটন বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন প্রতিভার সন্ধান পাওয়া যায়। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়।

একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২ সালের শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু ২০২৩ সালে তা ৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

তাছাড়া, এ মহা-আয়োজন কেন্দ্র করে গত দুই বছরে আরব আমিরাতে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কার হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে ভিসা সংস্কার ও শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ার সুযোগ অন্যতম। এসব পরিবর্তনের ফলে গত দুই বছর আরব আমিরাত উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কাতারের অর্থনীতি ভীষণ শক্তিশালী। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ধরে রেখেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি বেড়েছে ১২ শতাংশ।

তাছাড়া কাতারের পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টদের আশা, বিশ্বকাপের পর আগের তুলনায় দেশটিতে বাণিজ্য, পর্যটনখাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে কাতারের খরচের একটি বিশাল অংশ বহন করেছে পর্যটকরা, যা মোট খরচের ৮৭ শতাংশ। একই বছর আতিথেয়তা খাতে ৪৪ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন কাতারি রিয়াল ব্যয় করেছে দেশটি, যা মোট ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক এ সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, গত বছর কাতারের পর্যটন খাতে প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ হিসাবে মোট জনশক্তির ১২ শতাংশ এসেছে পর্যটন থেকে।

২০২১ সালে কাতারের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ১০ দশমিক ৩ শতাংশ আসে ভ্রমণ ও পর্যটন থেকে। সেবছর মোট আয় হয় ৬৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন কাতারি রিয়াল। চলতি বছরের শেষে এ হার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী কাতার কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, আগামী ২০২৬ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলে ৪৮টি দল অংশ নেবে। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দল খেলার ‍সুযোগ পেতে পারে। অনেকের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের যত বেশি দল ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে বড় এ আয়োজনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে, ততই মধ্যপ্রাচ্যের বাণিজ্য ও পর্যটনখাত সম্প্রসারিত হবে।

এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ক্রীড়া উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে মুখিয়ে আছে। এরই মধ্যে লা লিগার সঙ্গে দেশটির ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের চুক্তি হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় স্প্যানিশ ফুটবল কর্তৃপক্ষ আরব আমিরাতের অনূর্ধ্ব ১৮ ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ দেবে।

অন্যদিকে, স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ জানিয়েছে, দুবাইয়ে তারা আন্তর্জাতিক মানের থিম পার্ক চালু করবে। এ ছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা এখন ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে বিনিয়োগ করছেন।

২০১১ সালে কাতার ফ্রান্সের খ্যাতনামা ফুটবল ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন বা পিএসজিকে কিনে নেয়। এ ক্লাবের জন্য ডেভিড বেকহামকেও কিনে নেয় কাতার। সবমিলিয়ে পিএসজির জন্য কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করে দেশটি।

গত শতকের ৯০ এর দশক থেকেই কাতার খেলাধুলার মাধ্যমে নিজেদের ভাবমূর্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। পিএসজিতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ছাড়াও ২০২২ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার জন্যই ব্যাপক যোগাযোগ চালিয়ে সফল হয় দেশটি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্য অনেক দেশ যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নে শক্তিপ্রয়োগের দিকে এগোচ্ছে, কাতার তখন এগোচ্ছে ভিন্নপথে। কেবল ২০২২ বিশ্বকাপ নয়, ইউরোপের ক্লাব ফুটবলেও বিশাল বিনিয়োগ মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিকে উপস্থাপন করছে অন্য এক চেহারায়।

কাতার এয়ারওয়েজের মতো রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা বায়ার্ন মিউনিখের মতো বিভিন্ন ইউরোপীয় ক্লাবে বিনিয়োগ শুরু করে। ফলে ইউরোপের সেরাদের লড়াইয়ে ফাইনালটা যখন পিএসজি আর বায়ার্নের মধ্যে হয়, তখন যেই জিতুক না কেন আসলে জয় হয় কাতারের।

জার্মানির কনরাড আডেনয়্যার ফাউন্ডেশন টু গালফ স্টেটসের প্রতিনিধি ফাবিয়ান ব্লুমবার্গ বলেন, খেলাধুলা ও বিজ্ঞানের কৌশলগত বিনিয়োগ কাতারকে এগিয়ে নিয়ে চলছে। দুটি বিষয়ই একদিকে কাতারের ক্ষমতাও বাড়াচ্ছে ও বহির্বিশ্বে কাতারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।

সূত্র : দ্য ন্যাশনাল নিউজ, আল-জাজিরা

পূর্ববর্তী নিবন্ধওয়ালটন ফ্রিজ কিনে লাখ টাকা ক্যাশব্যাক পেলেন সাভারের পারভীন
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বকাপ জয়ে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন