শেয়ারবাজারে সূচক বাড়লেও কমেছে লেনদেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা দুই কার্যদিবস দরপতনের পর বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচক কিছুটা বেড়েছে। তবে অব্যাহত রয়েছে লেনদেন খরা। লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমে গেছে।

মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে। অবশ্য দাম বাড়া বা কমার তুলনায় দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি রয়েছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বুধবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার মাধ্যমে। এতে লেনদেনের ১৩ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায়।

তবে ১২টার পর থেকে সূচক টানা উপরের দিকে উঠতে থাকে। এতে সবকটি মূল্যসূচক বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। তবে দাম কমার তালিকায় বড় থাকে।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৭৪ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯১টির। আর ১৬৮টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। এরপরও ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৯৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৫৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সবকটি মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২৬৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

এর মাধ্যমে টানা চার কার্যদিবস ডিএসইতে তিনশ কোটি টাকার কম লেনদেন হলো। এর মধ্যে গত সোমবার ডিএসইতে প্রায় আড়াই বছর পর দুইশ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়।

শেয়ারবাজারে এমন লেনদেন খরা দেখা দিলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) লেনদেন বাড়াতে সম্প্রতি ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম) তুলে দিয়েছে।

শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন দেখা দিলে চলতি বছরের ২৮ জুলাই প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় বিএসইসি। এতে শেয়ারবাজারে দরপতন কিছুটা কমলেও দেখা দেয় লেনদেন খরা। সম্প্রতি লেনদেন খরা আরও প্রকট হয়। এতে ফ্লোর প্রাইসের সমালোচনা করে বিভিন্ন পক্ষ।

এমন পরিস্থিতিতে গত ২১ ডিসেম্বর ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়ে একটি নির্দেশনা জারি করে বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নতুন সার্কিট ব্রেকার (দাম বাড়া বা কমার সীমা) চালু করা হয়।

নতুন সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম অনুযায়ী, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম একদিনে এক শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। তবে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম কার্যকর হবে।

সার্কিট ব্রেকারের এই নিয়মের কারণে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পরও ১০ টাকার নিচে থাকা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম নতুন করে আর কমার সুযোগ নেই। আবার যে ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়েছে বাজার মূলধনে সম্মেলিতভাবে সেসব প্রতিষ্ঠানের অবদান ৫ শতাংশের মতো। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমলেও মূল্যসূচকে খুব একটা প্রভাব রাখছে না।

এদিকে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার ১২ কোটি ৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মুন্নু সিরামিক।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, বসুন্ধরা পেপার, প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, মুন্নু এগ্রো, জেনেক্স ইনফোসিস এবং অ্যাডভেন্ট ফার্মা।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৫টির এবং ৭৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেরা করদাতার সম্মাননা পেলো প্রাণ ডেইরিসহ ১৪১ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান
পরবর্তী নিবন্ধটাকায় এলসি খুলতে অনুমতি চাইলো বিকেএমইএ, বিটিএমএর দ্বিমত