নিউজ ডেস্ক : লাভজনক হওয়ায় রাজবাড়ী জেলায় বাড়ছে মিষ্টি ও সাচিসহ বিভিন্ন জাতের পানের আবাদ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ পান এখন রপ্তানি হচ্ছে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, সিঙ্গাপুর ও মালোয়েশিয়াসহ বিশ্বের ৮ দেশে।
চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে সরবরাহ। দিন দিন বাড়ছে পান চাষের পরিধি।
রাজবাড়ীর ৪ উপজেলার মধ্যে পান আবাদ হয় শুধু বালিয়াকান্দিতে। চলতি মৌসুমে জেলার ৫ শতাধিক চাষি পানের আবাদ করেছেন। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা।
সরেজমিনে বালিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন পানের বরজে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ পানে ভরে গেছে বরজ। লকলকে ডগায় শোভা ছড়িয়ে পরিণত প্রতিটি পানের পাতা।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বিস্তীর্ণ বরজের চিত্র এমনই। প্রায় ৮৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে মিষ্টি ও সাচিসহ বিভিন্ন জাতের পান। প্রতি শতক জমিতে রোপন করা হয়েছে ৫ শতাধিক পান গাছ।
পানচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিটি গাছ থেকে ৫০টি করে পান বিক্রয় উপযোগী পাওয়া যায়। ৮০টি পানে হয় এক পণ এবং ৪০ পণে হয় এক কুড়ি। বড় ও ভালো মানের প্রতি কুড়ি পান বিক্রি হয় ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। গুণে মানে ভালো হওয়ায় রাজবাড়ীর পানের খ্যাতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও। ভালো লাভ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে পান চাষের পরিধি।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, প্রতি বছর জেলায় ৭০ কোটি টাকার বেশি পানের বাজার তৈরি হয়। উৎপাদন খরচের সমান লাভ হওয়ায় পান চাষে দিন দিন আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা।
চলতি মৌসুমে বালিয়াকান্দি উপজেলার আড়কান্দি, বেতেঙ্গা, চর আড়কান্দি, ইলিশকোল, বেতেঙ্গা, খালকুলা,বহরপুর এলাকায় ব্যাপক পানের আবাদ হয়েছে।
বহরপুর ইউনিয়নের পানচাষি আব্দুল মাজেদ বলেন, মিষ্টি পান চাষে উর্বর ভূমি হিসেবে পরিচিত বালিয়াকান্দি উপজেলা। এ অঞ্চলের পানের সুখ্যাতি বহু পুরোনো। এখানে সাধারণত দুই জাতের পান উৎপাদন হয়। মিষ্টি পান আর সাচি পান। এখানকার মিষ্টি পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৮টি দেশে রপ্তানি করা হয়। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে প্রতি বছর কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। অনেক সময় পানচাষিদের বেকায়দায় পড়তে হয়। কারণ, পানের রোগের বিষয়ে কৃষি বিভাগে নেই কোনো ধরনের পরামর্শের সুযোগ।
পানচাষি গনেশ মিত্র বলেন, বালিয়াকান্দি উপজেলার আড়কান্দি, বেতেঙ্গা, চরআড়কান্দি, ইলিশকোল,বেতেঙ্গা, খালকুলা, বালিয়াকান্দি, বহরপুর এলাকায় ব্যাপক পানের আবাদ হয়। পূর্ব পুরুষের আমল থেকে পানের চাষ করে আসছি আমরা। সেই ঐতিহ্যটা ধরে রাখছি।
চাষি আ. আলীম বলেন, এ অঞ্চলে সাচি ও মিষ্টি পান প্রচুর জন্মে। মিষ্টি পান রাজবাড়ী জেলাসহ পার্শ্ববর্তী কয়েক জেলার চাহিদা মিটিয়ে ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, নেপাল, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া রপ্তানি করা হয়। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়।
চাষি আজমল সেখ বলেন, পান অর্থকরী ফসল হলেও কৃষি বিভাগের তেমন কোনো সহযোগিতা নেই। সরকারিভাবে আমাদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করলে পান চাষকে আরও লাভজনক ও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব হবে।
বহরপুর পান বাজারের ব্যবসায়ী সুশান্ত দত্ত বলেন, ৮০ পিস পানে হয় ১ বিরা। বড় আকারের ভালো ১ বিরা পানের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এগুলো গাছের মাথার পান। মাঝারি আকারের ১ বিরা পানের দাম দেড়শ টাকা আর একেবারে ছোট আকারের পান ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৮০ পিস পানে ১ বিরা তেমনি ৪০ বিরায় ১ কুড়ি। ভালো মানের ১ কুড়ি পানের দাম ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত।
পান ব্যবসায়ী মানিক দাস জানান, বালিয়াকান্দির পান মিষ্টি ও সুস্বাদু। বিভিন্ন জেলায় এখানকার পান বিক্রি হয়। বালিয়াকান্দির পান প্রসিদ্ধ।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৮৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে এবার। এই এলাকায় সাচি, দেশি ও মিঠা পান আবাদ হয়। প্রতি শতক জমিতে ৪০০ থেকে ৫০০টি পান গাছ হয়। প্রতিটি গাছে ১০০ থেকে ১৫০টি পাতা হয়। এর মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে ৫০টি পাতা পাওয়া যায়।
তিনি আরও জানান, প্রতি বছর ৭৩ কোটি টাকার পান উৎপাদিত হচ্ছে বালিয়াকান্দিতে। যার মধ্যে পানের ব্যবস্থাপনায় ৩৫ থেকে ৩৬ কোটি টাকা খরচ হয়। বাকি ৩৭ কোটি টাকা বালিয়াকান্দি উপজেলা থেকে পান চাষ হতে আয় করা সম্ভব। বালিয়াকান্দির পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাহিরের দেশে রপ্তানি হচ্ছে। চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।