নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামীতে হাওর অঞ্চলের প্রতিটি রাস্তা হবে এলিভেটেড। এটা মাটি ভরাট করে না, এলিভেটেড করা হবে।
যাতে বর্ষাকালে পানি প্রবাহ ঠিক থাকে, মাছ চলাচল করতে পারে।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হাওর অধ্যুষিত মিঠামইনে নবনির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ সেনানিবাস উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
হাওর এলাকার মানুষের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আসলে এই এলাকাটি (মিঠামইন) অর্থ্যাৎ হাওর অঞ্চল বর্ষাকালে ছোট ছোট দ্বীপের মতো হয়ে যায়। এখন ঠিক তার বিপরীত। এখন আমরা দেখছি ফসলে ভরে গেছে। রাস্তাঘাট আছে। কিন্তু বর্ষাকালে ভিন্ন চেহারা। এ অঞ্চলের মানুষকে জীবন যুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলায় মিঠামইনে নব প্রতিষ্ঠিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস হাওর এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। তাছাড়া, দেশের উত্তর-পূর্বাংশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও জোরদার হবে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রশংসা করেন তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি প্রত্যেক ক্ষেত্রে যখন যে দায়িত্ব পালন করেছেন, অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। বাংলাদেশের যুদ্ধ এবং যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে তার বিরাট অবদান রয়েছে। তিনি নিবেদিত প্রাণ এবং সৎভাবে জীবনযাপন করে এদেশের মানুষের সেবা করে গেছেন। কাজেই তার নামে এ সেনানিবাস করতে পেরে আমরা সত্যিই খুব আনন্দিত।
শেখ হাসিনা বলেন, এ দুর্গম অঞ্চলের মানুষের পাশে থাকা, তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হওয়া, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে তিনি (আবদুল হামিদ) নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তিনি যখন রাষ্ট্রপতি হয়েছেন তখন ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন এ অঞ্চলে একটা সেনানিবাস করার। তারই ইচ্ছায় এ সেনানিবাসটি আমরা গঠন করেছি। তার নামেই এ সেনানিবাস আমরা উৎসর্গ করেছি।
সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে সরকার সর্বাত্মক কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে সর্বাত্মকভাবে কাজ করছি। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার, টাইগার এম.এল.আর.এস, শোরাড মিসাইল, চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক, এ.পি.সি, ক্ষেপনাস্ত্র ও অন্যান্য যুদ্ধ সরঞ্জাম কিনেছি। তাছাড়া, উন্নত তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সরঞ্জামাদি এবং আধুনিক যানবাহন কিনেছি।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করছি। সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং বরিশালে ৭ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি।
তিনি বলেন, বিগত ৪ বছরে আমরা বিভিন্ন ফরমেশনের অধীনে ৩টি ব্রিগেড এবং ছোট-বড় ৫৮টি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছি। একই সঙ্গে ২৭টি ছোট-বড় ইউনিটকে এডহক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ৯টি সংস্থাকে পুনর্গঠন করেছি। গত বছর মাওয়া-জাজিরাতে শেখ রাসেল সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেছি। বর্তমানে রাজবাড়ী ও ত্রিশালে নতুন দু’টি সেনানিবাস স্থাপনের কার্যক্রমও চলছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে তিনি সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে উৎপাদন, বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
সেনানিবাস উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, দুই যুগেরও বেশি সময় পর মিঠামইনে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগমনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে এ অঞ্চলে। এ সফরে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ি যান।
সেনানিবাস উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাষ্ট্রপতির বাড়ি গিয়ে আতিথেয়তা গ্রহণ করবেন তিনি। পরে বিকেলে মিঠামইন হেলিপ্যাড মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন।
এদিকে নিজের বাড়িতে জাতির পিতার কন্যাকে স্বাগত জানাতে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বঙ্গভবন থেকে হেলিকপ্টারে মিঠামইন আসেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। শেখ হাসিনাকে নিজ গ্রামের বাড়িতে হাওরের মাছ, অষ্টগ্রামের পনিরসহ স্থানীয় ঐতিহ্যের খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হবে।