নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ অনেক বেশি সাশ্রয়ী, আকর্ষণীয় এবং নিরাপদ। এখানে বিনিয়োগে রয়েছে প্রচুর সুযোগ-সুবিধা। এরই মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ চলছে, বিনিয়োগও আসতে শুরু করেছে। এসব দিক বিচেনায় বিশ্বের অন্যান্য দেশকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
রোববার (১২ মার্চ) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলমান বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে এ আহ্বান জানান তারা। আন্তর্জাতিক এ বিজনেস সামিটের আয়োজন করেছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।
আজ বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের দ্বিতীয় দিন। ব্যবসায়িক ধারণা আদান-প্রদান, পারস্পারিক সম্পর্ক গড়ে তুলতেই এ সামিটের আয়োজন করেছে এফবিসিসিআই।
এর আগে শনিবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনব্যাপী এই বিজনেস সামিটের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি একইদিন সামিটের অন্যতম আকর্ষণ বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপোরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ উৎপাদনব্যবস্থায় দক্ষতা আনার চেষ্টা করছে। ৬০ বিলিয়ন থেকে ২০৩১ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে দেশে বর্তমানে ভালো বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে। পাওয়ার সেক্টরের জন্য আমরা এরই মধ্যে কাতার ও সৌদি আরবের সঙ্গে কাজ করছি। গ্যাসের সমস্যা সমাধানে অভ্যন্তরীণ উৎসকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিজনেস সামিট উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রথম সেশনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সরকার বিনিয়োগবান্ধব করে সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করেছে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। আমাদের ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজও এগিয়েছে। এরই মধ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে বিডা। ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা এসেছে। ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে কাজ করছে দেশ। এ বিনিয়োগে আমাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছে এফবিসিসিআই।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, ইকোনমিক জোন, বিনিয়োগকারীদের সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চেয়ে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বিনিয়োগ পরিবেশ রয়েছে আমাদের এখানে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের এখানে বিনিয়োগ করলে শ্রমিকখাতে সাশ্রয় হবে ৪৭ থেকে ৮৪ শতাংশ। ম্যানেজারস স্যালারিতে সাশ্রয় হবে ৪১ থেকে ৬৯ শতাংশ পর্যন্ত। এছাড়া ৬ থেকে ৮৯ শতাংশ সাশ্রয় হবে পানিতে, বিদ্যুতে সাশ্রয় হবে ১০ থেকে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত।
একই সঙ্গে দুর্নীতির বিষয়েও কথা বলেন সালমান এফ রহমান। বিদেশি ডেলিগেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সরকার প্রধান (প্রধানমন্ত্রী) এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। কোনো ধরনের অনিয়মকে আমরা ছাড় দেই না। আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা খাতে সুবিধা রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় বলতে পারি আমাদের দেশে আপনার বিনিয়োগ হবে নিরাপদ।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি হামীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ বলেন, বিশ্বে এখন ম্যানমেড ফাইবারের চাহিদা বাড়ছে। ক্রেতারা এখন ম্যানমেড ফাইবার পণ্য চায়। এ খাতে বিনিয়োগের সু্যোগ রয়েছে। এফবিসিসিআইয়ের এমন উদ্যোগ থাকলে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আনা আরও সহজ হবে। আমাদের দেশে ভালো জব মার্কেট আছে, যেটা অন্য দেশের চেয়ে সাশ্রয়ী। ইকোনমিক জোনে ননস্টপ সার্ভিস শুরু হয়েছে। সুতরাং বলতে পারি এ দেশে নিরাপদে বিনিয়োগ করতে পারেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের মেগা প্রকল্প ঘিরে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা সেতুসহ আরও অনেক উন্নয়ন হয়েছে বিনিয়োগ-ব্যবসা সহজ করতে। বিশ্বের মধ্যে সবুজ কারখানা সবচেয়ে বেশি আমাদের দেশে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্লিন সবুজ কারখানাও আমাদের দেশে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ রয়েছে আমাদের। আসুন আমাদের এখানে, সব সুবিধা রয়েছে, বিনিয়োগ করুন। এসময় তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
ঢাকায় আয়োজিত এই সামিটে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রীরা অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ১৭টি দেশের ২০০টিরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি এবং ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে সামিটের আয়োজন করেছে এফবিসিসিআই।
বিগত ৫০ বছরে অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অর্জন এবং রপ্তানি ও স্থানীয় ভোক্তা বাজারের পাশাপাশি বিনিয়োগ সক্ষমতা বিদেশিদের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই। বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে এফবিসিসিআইয়ের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। বিভিন্ন কৌশলগত বিষয়ে তিনটি প্লেনারি সেশন, ১৪টি প্যারালাল সেশন, বিজনেস টু বিজনেস মিট, নেটওয়ার্কিং সেশন, একটি ওপেন হাউস রিসেপশন এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের জন্য গাইডেড ট্যুর রয়েছে এ সামিটে।