নিউজ ডেস্ক : বায়ুমানে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শনিবার (২৫ মার্চ) ৭ম স্থানে উঠে এসেছে রাজধানী ঢাকা। এদিন বেলা পৌনে ১১টায় ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ছিল ১৪০, যা বাতাসের মানকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে নির্দেশ করছে।
বিশ্বের অন্যান্য শহরের মধ্যে ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে থাকলেও বাংলাদেশের শহরগুলোর মধ্যে কুমিল্লার অবস্থা আরও খারাপ। এদিন সকালে কুমিল্লার একিউআই স্কোর ছিল ১৬৮।
১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০-এর বেশি থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। আর ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোর ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের ৫টি বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে। এগুলো হলো: বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ ও ওজোন (ও৩)।
দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণের কবলে রয়েছে ঢাকা। এর বাতাসের গুণগতমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়।
২০১৯ সালের মার্চে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ুদূষণের ৩টি প্রধান উৎস হলো: ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা এবং নিয়ম না মেনে প্রতিনিয়ত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা।
উল্লেখ্য, কয়েক মাস ধরেই ঢাকা বাতাসের মানের দিক থেকে দূষিত শহরের তালিকায় রয়েছে।
ক্যাপসের পরিচালক ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার সম্প্রতি সময় সংবাদকে বলেন, বায়ুদূষণের মাত্রা ২০০ ছাড়ালে বলা হয় মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর। ৩০০ হলে দুর্যোগপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শীত শুরু হলে এবং শেষের দিকে মানে শুষ্ক মৌসুমের কারণে এ ধরনের আবহাওয়া বছর বছর বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে এক সময় জরুরি অবস্থাও জারি করা হতে পারে বলে মনে করেন এ গবেষক।
রাজধানীর বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ নির্মাণকাজ, ইটভাটা ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি। যেখানে-সেখানে বর্জ্য পোড়ানোর কারণেও ঘটছে দূষণ। দুই যুগ ধরে এ বিষয়ে গবেষণা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তথ্য বলছে, যেসব ধূলিকণা দেখতে পাওয়া যায় তার মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় রয়েছে পিএম ২.৫ নামে একটি কম্পাউন্ড, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে পুরো সিস্টেমকে অকেজো করে ফেলতে পারে।
ঢাবির রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘পিএম ২.৫ নামের কম্পাউন্ডটি নাকের মধ্য দিয়ে ব্রেনে গিয়ে জমা হয়। এরপর স্বাভাবিক সেল এবং কার্যক্রমগুলো নষ্ট করে দেয়। এর মাধ্যমে ক্যানসারের মতো রোগ দ্রুত শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।’
কয়েক বছর ধরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে নগরবাসী মাত্র ২০ দিনের মতো স্বাভাবিক বায়ুগ্রহণ করে বলেও জানা গেছে এ গবেষণায়।