কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে এবার পাওয়া গেছে ১৯ বস্তা টাকা। দিনব্যাপী গণনা শেষে সেই টাকার অংক দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা। একইসঙ্গে মিলেছে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার।
শনিবার (৬ মে) রাত সাড়ে ৯টায় পাগলা মসজিদের সিন্দুক খোলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘চার মাস পর আবারও খোলা হয়েছে পাগলা মসজিদের সিন্দুক। এবার সব মিলিয়ে পাওয়া গেছে ১৯ বস্তা টাকা। সকাল থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত গণনা শেষে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৭ হাজার ৬৮৯ টাকা। যা পাগলা মসজিদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।’
এর আগে, গত জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে খোলা হয়েছিল সিন্দুক। তখন পাওয়া যায় ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। তখন সেটিই ছিল পাগলা মসজিদের সিন্দুকে পাওয়া সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা।
পাগলা মসজিদ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত ৯০ থেকে ৯৫ দিনের মধ্যে ভরে যায় মসজিদের আটটি সিন্দুক। এ কারণে তিন মাস পর পর খোলা হয় এগুলো। তবে এবার রোজাসহ নানা কারণে একটু দেরিতে খোলা হলো সিন্দুকগুলো।
এর আগে, গত বছরের ১ অক্টোবর খোলা হয় সিন্দুক। তখন পাওয়া যায় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। তার আগে, ওই বছরের ২ জুলাই পাওয়া যায় ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা। তারও আগে, গত বছরের মার্চে পাওয়া যায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।
শনিবার (আজ) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কঠোর নিরাপত্তা ও বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে খোলা হয় সব সিন্দুক। এরপর টাকাগুলো বস্তাবন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় মসজিদের দোতলায়। টাকাগুলো ভরাট করতে ১৯টি বস্তার প্রয়োজন হয়।
স্থানীয়রা জানান, মুসলমানসহ সব সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করেন। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এ বিশ্বাসে তারা ছুটে আসেন পাগলা মসজিদে। শুধু টাকা নয়, স্বর্ণালঙ্কারসহ পাওয়া যায় বিদেশি মুদ্রাও।
পাগলা মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, ‘মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব, অসহায় লোকদের আর্থিক সহায়তা, ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছে। এছাড়া, করোনার সময় মসজিদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবায় যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্র কিনে দেওয়া হয়েছে। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান দেওয়া হয় মসজিদের তহবিল থেকে।’
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্য এনায়েত করিম অমি বলেন, ‘কেবল মুসলমান নয়, অন্য ধর্মের লোকজনও পাগলা মসজিদে বিপুল অঙ্কের টাকা-পয়সা দান করে। এই মসজিদটি সব ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্রতার প্রতীক ও আস্থার জায়গা। ফলে দেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষ পাগলা মসজিদ পরিদর্শনে আসে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বর্তমানে দানের টাকা জমানো হচ্ছে। এ টাকায় এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল কমপ্লেক্স হবে। যেখানে ৬০ হাজার মুসল্লির একসঙ্গে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। নারীদের জন্য থাকবে পৃথক নামাজের ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে থাকবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ আরও নানা আয়োজন। এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষের পথে। এখন সবকিছু গুছিয়ে আনা হচ্ছে। খুব শিগগিরই আমরা মূল কাজে হাত দেব।’