নিজস্ব প্রতেবেদক: দেশের শেয়ারবাজার টানা চার সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গত সপ্তাহজুড়ে দরপতন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ছয়শ কোটি টাকা। একই সঙ্গে কমেছে সবকয়টি মূল্যসূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে প্রায় দেড় শতাংশ।
দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকা বড় হলেও গত কয়েক মাসের মতো তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা সংকট ছিল গত সপ্তাহজুড়েও। ফলে দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
এমন বাজারে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭৪ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসই’র বাজার মূলধন কমেছে ৫৯৩ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ৩৯১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬৯টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৪টির। এছাড়া ২০৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২ দশমিক ৭১ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২৯ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে এ সূচক বাড়ে ৩৫ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ। তার আগের দুই সপ্তাহে যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ এবং ৩ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বাড়ে সূচক।
প্রধান মূল্যসূচকের সঙ্গে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৮ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ২ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ।
ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকও গত সপ্তাহে কমেছে। সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে এক দশমিক ১৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৮ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ।
সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় এক হাজার ১০৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে এক দশমিক ৪০ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যা ১৫ কোটি ৪১ লাখ।
সবশেষ সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৪৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ৫ হাজার ৫২১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৭৭ কোটি ৮ লাখ টাকা বা এক দশমিক ৪০ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩৭ কোটি ৬৭ লাখ ৫২ হাজার টাকার। যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩৩ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ১৫৯ কোটি ৩০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- আরডি ফুড, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, জেমিনি সি ফুড, অগ্নি সিস্টেম, আইটি কনসালটেন্টস, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এবং আমরা নেটওয়ার্ক।