নিউজ ডেস্ক : ক্রেতা সংকটে দিনের পর দিন ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে থাকা ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দাম এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মাত্র তিনদিনে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে প্রায় ২৪ শতাংশ। দাম বাড়ার পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ার বড় অঙ্কেও লেনদেন হচ্ছে। এমনকি প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) টানা তিন কার্যদিবস লেনদেনের শীর্ষ স্থানটি ধরে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অথচ কিছুদিন আগেই কোম্পানিটির শেয়ারের কোনো ক্রেতা ছিল না। ক্রেতা না থাকায় ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম ২৩ টাকা ৫০ পয়সায় আটকে থাকে। এটিই কোম্পানিটির ফ্লোর প্রাইস। অর্থাৎ প্রায় এক বছর ধরে সর্বনিম্ন দামে আটকে ছিল ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার।
পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি শেষে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই এ কোম্পানির শেয়ার হঠাৎ করেই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্ধুতে চলে আসে। এতে দীর্ঘদিন পর গত রোববার কোম্পানিটির প্রায় ৪০ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়। অবশ্য এরপরও শেয়ার দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকে।
তবে সোমবার কোম্পানিটির ২ কোটি ৩৬ লাখ ২৭ হাজারের বেশি শেয়ার লেনদেন হয়। বিপুল পরিমাণ লেনদেনের সঙ্গে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ফ্লোর ভেঙে ওপরে উঠে আসে। ২৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম দাঁড়ায় ২৪ টাকা ১০ পয়সা। অর্থাৎ শেয়ার দাম বাড়ে ৬০ পয়সা বা ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
এমন বড় অঙ্কের লেনদেনের পরের কার্যদিবস মঙ্গলবারও কোম্পানিটির শেয়ার বড় অঙ্কে লেনদেন হয়। এদিন কোম্পানিটির ১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি শেয়ার লেনদেন হয়। আর শেয়ারের দাম বাড়ে ২ টাকা ৪০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। একদিনে কোম্পানিটির শেয়ার দাম এর থেকে বেশি বাড়ার সুযোগ ছিল না।
দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ দাম বাড়ার পাশাপাশি কোম্পানিটির কেনার আদেশও আসে বড় অঙ্কে। লেনদেনের এক পর্যায়ে কোম্পানিটির বিপুল পরিমাণ শেয়ার দিনের সর্বোচ্চ দামে কেনার আদেশ আসলেও বিক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।
আজ বুধবারও কোম্পানিটির শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। আজ কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২ টাকা ৬০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর লেনদেন হয়েছে ২ কোটি ২ লাখ ২৭ হাজারের বেশি শেয়ার।
এ তিন কার্যদিবসেই (৩, ৪ ও ৫ জুলাই) টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির শেয়ার সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে। এ তিনদিনে কোম্পানিটির শেয়ার ১৫০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। অথচ ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ২ জুলাই পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার পাবলিক মার্কেটে সব মিলিয়ে ১০ কোটি টাকারও লেনদেন হয়নি।
হঠাৎ করে কোম্পানিটির শেয়ারের এমন দাম বাড়ার পেছনে কোনো বিশেষ চক্র রয়েছে বলে অভিযোগ করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কোনো বিশেষ গ্রুপ ছাড়া হঠাৎ করে কোনো কোম্পানির শেয়ার এমন দাম বাড়তে পারে না এবং এত বিপুল পরিমাণ লেনদেন হতে পারে না।
এদিকে শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, ফু-ওয়াং ফুডের নাম পরিবর্তন হবে। সেই সঙ্গে কোম্পানিট রাইট শেয়ার লভ্যাংশ দেবে। ঈদের ছুটির পর শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওযার পর পরই এ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার বড় অঙ্কের লেনদেন এবং দাম বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, যেভাবে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার দাম বাড়ছে এবং লেনদেন হচ্ছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে এর পেছনে কোনো বিশেষ গ্রুপ আছে। কোনো বিশেষ গ্রুপ ছাড়া হঠাৎ করে একটি কোম্পানির শেয়ার দাম এভাবে বাড়তে পারে না।
তিনি বলেন, অনেক সময় বিশেষ গ্রুপ নির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শেয়ার নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। এরপর বাজারে বিভিন্ন গুঞ্জন ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তারপর শেয়ার দাম বাড়তে দেখা যায়। অনেক সময় গুঞ্জন সত্য হয়। ফু-ওয়াং ফুডের ক্ষেত্রে কী হচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্ষতিয়ে দেখা উচিত।
হঠাৎ শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর বিত্তি করে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের দশমিক ৫০ শতাংশ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দিয়েছে। তার আগে ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের জন্য কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
এদিকে সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১৭ পয়সা মুনাফা করেছে। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ১১ পয়সা।
১১০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ৮ লাখ ৩৯ হাজার ২৮৪টি। এর মধ্যে মাত্র ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৮০ দশমিক ২২ শতাংশই শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ আছে বিদেশিদের কাছে।