টেকনোলজি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা দেখালো ওয়ালটন: পরিকল্পনামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ওয়ালটন আয়োজিত দেশের প্রথম একক শিল্পমেলা ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভান্সড কম্পোনেন্টস অ্যান্ড টেকনোলজি (এটিএস) এক্সপো-২০২৩’ এর পর্দা নামলো। দেশি-বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ওয়ালটনের এই একক শিল্পমেলা। সার্বিকভাবে সফল হয়েছে এটিএস এক্সপো।

শনিবার (১২ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর কুড়িলে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় হল-১ এ আয়োজিত ‘এটিএস এক্সপো-২০২৩’ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানায় আয়োজক প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন।

এটিএস এক্সপো’র সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি’র এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান শায়েখ ইউসুফ হারুন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ ফায়েজুল আমীন।

ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি’র ভাইস-চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন কোম্পানির পরিচালক তাহমিনা আফরোজ তান্না, শাহরিয়ার আলম শুভ ও ফারিহা আলম প্রভা, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও গোলাম মুর্শেদ। সঞ্চালনায় ছিলেন কোম্পানির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিন খান।

সমাপনী অনুষ্ঠানে ভারতের পশ্চিম বাংলার ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিপণন প্রতিষ্ঠান ‘সুস্মিতা ইলেকট্রনিক্স প্রাইভেট লিঃ,’ গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড হুন্দাই এর অথোরাইজড লাইসেন্সড প্রতিষ্ঠান ‘গোল্ডেনআর্ক কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স প্রাইভেট লিঃ’সহ ‘গোল্ডস্টার হোম অ্যাপ্লায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ’ এবং ভানু ইলেকট্রিক্যাল প্রোপারটিজের সঙ্গে ওয়ালটনের ব্যবসায়িক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এটিএস এক্সপো’র সমাপনী দিনে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এসময় তিনি ওয়ালটনের অ্যাডভান্ডস টেকনোলজি, মেশিনারিজ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পোনেন্টস ও পণ্য দেখে অভিভূত হন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ওয়ালটন লাস ভেগাসে’র ফেয়ারে অংশগ্রহণ করেছে, জার্মানিতে পণ্য রপ্তানি করেছে- এসব সংবাদ যখন শুনি তখন খুব গর্ববোধ করি। আগে ভাবতাম- জাপান, চীন এসব দেশ টেকনোলজি পণ্য ও কম্পোনেন্টস তৈরি করতে পারবে; আমরা পারবো না। কিন্তু এটিএস এক্সপোতে ওয়ালটন তথা বাংলাদেশও ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্ট ও টেকনোলজি পণ্য তৈরির সক্ষমতা দেখিয়েছে। ওয়ালটনের সামনে এগিয়ে যাওয়ার বিশাল ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ওয়ালটন এই এক্সপোতে সেই ক্ষমতা দেখালো। জাপান, জার্মানি, আমেরিকা, ভারত সকল দেশের সঙ্গে সমানতালে বাংলাদেশকে সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ওয়ালটন।’

অনুষ্ঠানে ওয়ালটন হাই-টেকের ভাইস-চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম বলেন, এটিএস এক্সপো সর্বাত্মকভাবে সফল হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি সাড়া পেয়েছি আমরা। দেশি-বিদেশি অনেক কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ মেলা পরিদর্শন করেছেন। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে আমরা খুবই আনন্দিত এবং যা আগামীতে আরো এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের উৎসাহ যোগাবে। দেশে তৈরি প্রতিটি পণ্য বা কম্পোনেন্ট দেশের আমদানি নির্ভরতা কমাবে। দেশীয় শিল্পখাতকে শক্তিশালী করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

ওয়ালটন হাই-টেকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও গোলাম মুর্শেদ বলেন, প্রথমবারের মতো আয়োজিত এটিএস এক্সপোতে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। প্রতিবছর যদি এই ধরণের শিল্পমেলা আয়োজন করতে পারি, তবে দেশীয় শিল্পোদ্যাক্তাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পোনেন্টস এর জন্য বিদেশের মেলাগুলোতে আর যেতে হবে না। এক্ষেত্রে আমরা তথা বাংলাদেশ এখন যথেষ্ট স্বাবলম্বী। কোরিয়া, জাপানকে আমরা চিনেছি কয়েকটি ব্র্যান্ডের মাধ্যমে। অচিরেই বিশ্ব ওয়ালটন পণ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে চিনবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, গার্মেন্টস এর দেশে ওয়ালটনের মতো বিশাল সম্ভাবনাময় ইলেকট্রনিক্স শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে দেখে আমরা সন্তুষ্ট। ১৫ বছর আগেও দেশে সম্ভাবনাময় ইলেকট্রনিক্স শিল্প গড়ে উঠার কথা চিন্তা করতে পারিনি। কিন্তু আজ ওয়ালটন অসংখ্য ইলেট্রনিক্স পণ্যের পাশাপাশি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পপণ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেজন্য ওয়ালটন উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ। আমরা জানি- বিশ্বে একটি দেশকে তুলে ধরে। বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরবে ওয়ালটন ব্র্যান্ড।

অনুষ্ঠানে নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, এটিএস এক্সপোতে ওয়ালটন কোনো পণ্য নয়; অ্যাডভান্সড টেকনোলজি ও ইনোভেশন প্রদর্শন করেছে। বর্তমান বিশ্বে যারা ইনোভেশন করছে তারাই সবার চেয়ে এগিয়ে যায়। আজ ওয়ালটনের জন্য বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে শুধু পণ্যই নয়; অ্যাডভান্সড টেকনোলজি দিতেও প্রস্তুত। বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট উৎপাদন, এআই টেকনোলজি ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিবে ওয়ালটন।

এটিএস এক্সপোতে ৪টি ক্যাটাগরিতে মোট ২১ টি স্টলে ওয়ালটনের তৈরি আন্তর্জাতিকমানের ৫০ হাজারেরও বেশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস, কম্পোনেন্টস, সার্ভিসেস এবং টেস্টিং ফ্যাসিলিটিস প্রদর্শন করা হয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই প্রায় সকল প্রকার শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধাপে প্রধান কাঁচামাল ও কম্পোনেন্টস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নিজস্ব চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি দেশের অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে আমদানি বিকল্প গুণগতমানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যাটেরিয়ালস, কম্পোনেন্টস ও টেস্টিং সলিউশনস প্রদানের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা হ্রাসের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় ও দেশীয় শিল্পের ক্ষমতায়নে অবদান রাখবে ওয়ালটন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগস্টের ১১ দিনে এলো ৭ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকার রেমিট্যান্স
পরবর্তী নিবন্ধচিনির দাম কেজিতে কমলো ৫ টাকা