নিউজ ডেস্ক : টানা তিন সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গত সপ্তাহে দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। পাশাপাশি কমেছে সবকয়টি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে দৈনিক গড় লেনদেন। পাশাপাশি বাজার মূলধনও কমেছে।
অবশ্য দাম বাড়া বা কমার থেকে দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি। দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগের শেয়ার বা ইউনিট দাম ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ক্রেতা সংকট থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
প্রায় অর্ধেক প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা সংকট থাকার পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় ছিল অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এর ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। এছাড়া দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।
অবশ্য এর আগে টানা তিন সপ্তাহ মূল্যসূচক বাড়ে। একই সঙ্গে বাড়ে দৈনিক গড় লেনদেন। ডিএসইতে দুইশ কোটি টাকার ঘরে নেমে যাওয়া লেনদেন বেড়ে ছয়শ কোটি টাকার ওপরে চলে আসে। তবে গত সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন কিছুটা কমে এখন সাড়ে পাঁচশ কোটি টাকার ওপরে আছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬৬টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৯টির। এছাড়া ২০৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৪৯৭ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে।
অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৫ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৭ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। তার আগের দুই সপ্তাহে বাড়ে ১৯ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ এবং ২৫ দশমিক ২৬ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কমছে। এর মাধ্যমে টানা দুই সপ্তাহ কমলো সূচকটি। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ২ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি ৪ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ কমে।
বাছাই করা সূচকের মতো ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকও টানা দুই সপ্তাহ কমেছে। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৮ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ।
সবকয়টি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৭২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬৫৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৮২ কোটি ৮২ লাখ টাকা বা ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৬৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ২ হাজার ৬২২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৩১ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা ৯ দশমিক ২১ শতাংশ। মোট লেনদেন বাড়ার কারণ, গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ৮৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, জেমিনি সি ফুড, রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স, ইস্টার্ন হাউজিং, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।