নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েই চলেছে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো। গত কয়েক কার্যদিবসের মতো চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারও (১৭ সেপ্টেম্বর) দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে বিমা খাতে। সেই সঙ্গে লেনদেনেও বিমা খাতের আধিপত্য ছিল। এতে প্রায় দুই মাস পর প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৮০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।
লেনদেনের গতি বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দুটি বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে। এছাড়া ডিএসইতে দাম বাড়ার শীর্ষ ১০টি স্থানই দখল করেছে বিমা কোম্পানি।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে বিমা খাতে। সিএসইতেও দাম বাড়ার শীর্ষ দশটি স্থান দখল করেছে বিমা খাতের প্রতিষ্ঠান। তবে বাজারটিতেও দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। অবশ্য তারপরও বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক।
এর আগে গত সপ্তাহজুড়েই শেয়ারবাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখায় বিমা খাত। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে সর্বোচ্চ দাম বাড়া ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯টিই ছিল বিমা কোম্পানি। অবশ্য বিমা কোম্পানিগুলো সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখালেও সবকটি মূল্যসূচক কমে। সেই সঙ্গে দাম কমে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের।
এ পরিস্থিতিতে রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় প্রায় সবকটি বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। সেই সঙ্গে লেনদেনের আধাঘণ্টা পার হওয়ার আগেই দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে চারটি বিমা কোম্পানি। পাশাপাশি আরও বেশকটি বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি চলে আসে।
তবে বিমা খাতের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি অন্যান্য খাত। এতে লেনদেনের এক পর্যায়ে এসে বিমা কোম্পানিগুলোরও শেয়ার দাম কমতে থাকে। লেনদেনের শেষদিকে এসে বেশ কয়েকটি বিমা কোম্পানি দাম বাড়ার তালিকা থেকে দাম কমার তালিকায় চলে আসে। অবশ্য এরপরও যে কয়টি বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম কমেছে, বেড়েছে তার থেকে বেশি। এতে মূল্যসূচকও ঊর্ধ্বমুখী থেকেই দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৪টির এবং ১৬৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিমা কোম্পানি রয়েছে ২৮টি। আর দাম কমার তালিকায় বিমা কোম্পানি আছে ২২টি।
ডিএসইতে দাম বাড়ার শীর্ষ দশটি স্থান দখল করেছে-রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স এবং সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এর মধ্যে রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স এবং প্রভাতী ইন্স্যুরন্সে দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে।
বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এমন দেখানোর দিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৯ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩১১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৪০ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের গতিও বেড়েছে। বাজারটিতে গত ২০ জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৬৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬৯৭ কোটি ৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১৭০ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখানোর পাশাপাশি লেনদেনেও বিমা খাতের আধিপত্য ছিল। গত কয়েক কার্যদিবস ধরে লেনদেনের শীর্ষ স্থানে থাকা ফু-ওয়াং ফুডকে সরিয়ে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৩ কোটি ৪৮ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ।
পরের স্থানটিও দখল করেছে বিমা খাতের কোম্পানি। ৩৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে প্যারামউন্ট ইন্স্যুরেন্স। লেনদেনর তৃতীয় স্থানে থাকা ইস্টার্ণ হাউজিংয়ের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-ফু-ওয়াং ফুড, ইউনিক হোটেল, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং সোনালী পেপার।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ১৬৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৫টির এবং ৬২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।