বেসরকারি খাতে হবে অয়েল রিফাইনারি

নিউজ ডেস্ক : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল সরবরাহে নানা ধরনের সঙ্কট চলছে। এ অবস্থায় দেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি, পরিশোধন, মজুদ, বিতরণ ও বিপণন বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। এখন বেসরকারি উদ্যোক্তারা জ্বালানি তেল পরিশোধনের জন্য অয়েল রিফাইনারি স্থাপন করতে পারবেন।

সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি উদ্যোক্তারা জ্বালানি তেল আমদানি করে তাদের নিজস্ব পেট্রল পাম্পে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারবেন। এ লক্ষ্যে একটি নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন আইন-২০১৬ এবং ন্যাশনাল এনার্জি পলিসি-১৯৯৬ এর আইন ও বিধিমালায় প্রদত্ত ক্ষমতা ও নির্দেশনার আলোকে বেসরকারি পর্যায়ে রিফাইনারি স্থাপনের খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, বেসরকারি রিফাইনারিতে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের বিপণন শুরুর প্রথম পাঁচ বছরে ৬০ শতাংশ ডিজেল, পেট্রল, অকটেন, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল সরকার নির্ধারিত মূল্যে কিনে নেবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ জ্বালানি তেল নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ও নিজস্ব নিবন্ধিত বিপণন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিক্রি করা যাবে। তবে, বিক্রয় নেটওয়ার্কের স্বল্পতার কারণে কোনো বেসরকারি রিফাইনারি ৪০ শতাংশ তেল বিক্রি করতে না পারলে এর যেকোনো পরিমাণ বিপিসির কাছে বিক্রি করতে পারবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, পরবর্তী দুই বছরে বেসরকারি রিফাইনারিগুলো তাদের উৎপাদিত তেলের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিক্রি করতে পারবে। জ্বালানি তেলের আকর্ষণীয় ব্যবসায় বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততার প্রথম পাঁচ বছর পর উৎপাদিত জ্বালানির কত অংশ তারা বিপিসিকে সরবরাহ করবে, তা পর্যালোচনা করে ঠিক করা হবে। তবে, বিপিসির চাহিদা না থাকলে বা নিজস্ব বিপণন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিক্রির পর উদ্বৃত্ত জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে।

বেসরকারি উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত জ্বালানি তেল বিক্রি করতে দেশব্যাপী সড়ক, মহাসড়ক, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোয় পেট্রল পাম্প স্থাপন করতে পারবেন। এসব পেট্রল পাম্পে সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যে জ্বালানি তেল বিক্রি করা যাবে।

জানা গেছে, কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি জ্বালানি তেল আমদানি ও রিফাইনারি স্থাপনের অনুমতি চেয়ে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। তাদের মধ্যে আছে বসুন্ধরা গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, টিকে গ্রুপ ও এলিট গ্রুপ।

খসড়া নীতিমালায় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আবশ্যিক যোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, উদ্যোক্তাদের জ্বালানি পণ্য খাতের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের গত পাঁচ বছরের মধ্যে যেকোনো তিন বছরে প্রতি বছর টার্নওভার কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা বা সমমূল্যের মার্কিন ডলারে হতে হবে। বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে দেশে নিজস্ব কিংবা যৌথ মালিকানায় বার্ষিক কমপক্ষে ১৫ লাখ টন ক্ষমতাসম্পন্ন জ্বালানি তেল পরিশোধন বা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতাসম্পন্ন রিফাইনারি স্থাপন করতে হবে। তবে, বেসরকারি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বা তার কোনো পরিচালক ঋণখেলাপি হতে পারবেন না।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, বেসরকারি খাতে রিফাইনারি স্থাপনের জন্য কমপক্ষে ৮০ একর জমি থাকতে হবে এবং রিফাইনারির অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ন্যূনতম ২ লাখ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন স্টোরেজ সুবিধা থাকতে হবে। রিফাইনারি স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর আগে নিরাপত্তা গ্যারান্টি হিসেবে বিপিসির অনুকূলে বেসরকারি উদ্যোক্তাকে ২৫০ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হবে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির পর নিজস্ব মালিকানায় বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লাইটারেজ জাহাজ, কোস্টাল ট্যাঙ্কার ও ট্যাংকলরি থাকতে হবে।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি বাজার অস্থিতিশীল ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। তাদের মতে, বেসরকারি খাতকে যুক্ত করে জ্বালানি পরিশোধনের মিলিত সক্ষমতা গড়ে লাভবান হয়েছে প্রতিবেশী ভারত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধশেয়ারবাজারে সূচকের পতন