বাজার মূলধন হারালো আরও ৬শ কোটি টাকা

নিউজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবর আসার পর থেকেই শেয়ারবাজারে দরপতন চলছে। গত সপ্তাহজুড়ে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমায় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ছয়শ কোটি টাকার ওপরে কমে গেছে। একই সঙ্গে কমেছে সবকয়টি মূল্যসূচক। তবে কিছুটা বেড়েছে দৈনিক গড় লেনদেন।

গত ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানানো হয়। এরপর দেশের শেয়ারবাজারে দুই সপ্তাহ লেনদেন হয়েছে। এই দুই সপ্তাহেই পতন দেখতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। আর দুই সপ্তাহের পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক দেখা দিলেও শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে শেয়ারবাজারের সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই এ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়া যুক্তিসংগত নয়। বিনিয়োগকারীরা কম দামে শেয়ার বিক্রি করছেন বলেই শেয়ারের দাম কমে যাচ্ছে।

বাজার পর্যালোচনা দেখা যায়, গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৩৭টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২০টির। আর ২০৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম অপরিবর্তিত থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৬ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ৬৯৮ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে এক হাজার ৬২৬ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের পতনে বাজর মূলধন কমলো ২ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে।

ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২২ দশমিক ৯১ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২৫ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ২ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৫ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ।

আর ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে কমে ৫ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ।

সবকয়টি মূল্যসূচক কমলেও লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৫৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বা ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় এক হাজার ৮১৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৫২১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বা ২৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। মোট লেনদেন বেশি হারে বাড়ার কারণ গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সোনালী পেপারের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকার, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯২ কোটি ২৯ লাখ টাকার। ৮৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।

এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ফু-ওয়াং ফুড, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, দেশবন্ধু পলিমার, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, জেমিনি সি ফুড, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বের বৃহৎ পণ্যমেলা চীনের ক্যান্টন ফেয়ারে ৩য় বারের মত অংশ নিচ্ছে ওয়ালটন
পরবর্তী নিবন্ধএক্সিম ব্যাংকের সিলেট অঞ্চলের ব্যবসা উন্নয়ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত