নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর খিলক্ষেত থানার কাওলা এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সদস্য পরিচয়ে ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতি করেছে একটি চক্র। ঘটনার পর ডাকাতরা সাত জেলায় পালিয়ে যায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, ডাকাত দলে ছিল সাত সদস্য। তারা ‘কাটআউট সিস্টেমে’ পালিয়ে গিয়েছিল।
ডিবি জানায়, ডাকাতি করার পর পরই চক্রের সদস্যরা দ্রুত গাড়ির নম্বর প্লেট পরিবর্তন করে ফেলে। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ও সিমকার্ড ভেঙে পানিতে ফেলে দেয়। ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) গুলশান বিভাগ পলাতক ডাকাত দলের সাত সদস্যকেই দেশের সাত জেরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সবুজ মিয়া ওরফে শ্যামল (৩৯), সাহারুল ইসলাম ওরফে সাগর (২৩), আবু ইউসুফ (৪১), দিদার দিদার মুন্সী (৩৫), ফেরদৌস ওয়াহীদ (৩৫), আলামিন দুয়ারী দিপু (৪২) ও দাউদ হোসেন মোল্যা (৩৯)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার, র্যাবের জ্যাকেট, হ্যান্ডকাপ, খেলনা পিস্তল, ওয়ারলেস সেট, মোবাইল ফোন ও ডাকাতির টাকায় কেনা স্বর্ণালংকার এবং বাকি ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
রোববার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, গত ১০ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সোহেল আহমেদ সুলতান নামে এক ব্যবসায়ী উত্তরার আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংক থেকে দুটি চেকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব কর্মকর্তা অনিমেশ চন্দ্র সাহা সাড়ে ৮৩ লাখ টাকা তোলেন। ভুক্তভোগীর ব্যবসায়ী অংশীদার জাফর ইকবালের পক্ষে রাজন নামে এক ব্যক্তিকে ব্যাংকে বসেই সাড়ে ৩৫ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেন অনিমেশ। বাকি ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে প্রাইভেট কারে চড়ে তিনি বনানীর দিকে রওনা করেন।
গাড়িটি কাওলা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে টোল দিয়ে খিলক্ষেত ডেন্টাল কলেজের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বিকেল ৪টার দিকে মেরুন কালারের একটি প্রাইভেটকার এসে সেটিকে ওভারটেক করে সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। ওই গাড়ি থেকে বাহিনীর জ্যাকেট পরিহিত ৫-৬ জন ব্যক্তি র্যাবের পরিচয় দিয়ে গাড়ি থামায়। তারা আটকে ফেলা গাড়িতে অবস্থানরত অনিমেশ চন্দ্র সাহা ও মো. শাহজাহানকে তাদের ‘গাড়িতে অস্ত্র আছে’ বলে জানান।
পরে ওই দুজনকে হাতকড়া লাগিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে ডাকাতরা। এরপর ব্যাংক থেকে তোলা টাকা, কোম্পানির একটি ব্ল্যাংক চেক ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। পরে চোখ বাধা অবস্থায় অনিমেশ, শাহজাহান ও কোম্পানির গাড়ি চালক আবুল বাশারকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ৩০০ ফিট এলাকায় ফেলে রেখে যায় ডাকাত সদস্যরা। এ ঘটনায় সোহেল আহমদ সুলতান বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরও বলেন, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম তদন্তে নামে। মামলার বাদীর বক্তব্য, সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব পরিচয়ে অপহরণ ও ডাকাতি জড়িত দলটিকে সনাক্ত করা হয়।
তদন্তে দেখা যায়, সবুজের নেতৃত্বে ডাকাতি করা দলটি কাটআউট পদ্ধতিতে ডাকাতি করে। এর কৌশল হিসেবে ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ির একাধিক নম্বর প্লেট ব্যবহার করে। কাজ শেষে নিজেদের মোবাইল ফোন ভেঙে পানিতে ফেলে দেয়। এরপর নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় গিয়ে আত্মগোপন করে।
গ্রেপ্তার ডাকাত দলের সদস্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, এই চক্রটি ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির পরে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। এরমধ্যে তারা আইনজীবীদের জন্য আলাদা খরচ রেখে দেয়। ভাগে পাওয়া টাকা দিয়ে কেউ বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন, স্ত্রীর গহনা কিনেছেন, জুয়া খেলেছেন। ৪৮ লাখ টাকার মধ্যে সাড়ে ২৩ লাখ উদ্ধার করা হয়েছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা আগে বিভিন্ন ডাকাত দলের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেও এই দলে এমন কেউ নেই। তবে দলটিতে একজন মুহুরি পাওয়া গেছে। সাগর নামে একজন অনার্স-মাস্টার্স পাশ করে আইনজীবীর সঙ্গে কাজ করত। সে ডাকাত দলের একজনকে জামিন করাতে গিয়ে তাদের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। এরপর মুহুরি পেশা ছেড়ে ডাকাত দলের হয়ে কাজ করত। তার দায়িত্ব হলে বিভিন্ন ব্যাংকে রেকি করে বড় অংকের টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহকের তথ্য সরবরাহ করা।
এই চক্রের প্রত্যেক সদস্যের নামে ডিএমপিসহ দেশের ১৩ জেলায় ১০-১৫ টি করে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং মাদক মামলা রয়েছে।
বিভিন্ন ঘটনায় দেখা যায় ডাকাতরা র্যাব-ডিবি-পুলিশ পরিচয় দিতে হ্যান্ডকাফ ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করে। তারা এসব কীভাবে পায় জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা আসামিদের রিমান্ডে এনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করবো।