নিউজ ডেস্ক : দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হচ্ছে ফেনীর সোনাগাজীর বিস্তীর্ণ চরে। প্রকল্পটির কাজ শেষে চালু হলে ন্যাশনাল গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
প্রকল্পটির কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলছে প্যানেল বসানোর কাজ। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই প্রকল্পটি উৎপাদনে যাওয়ার আশা করছে সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় আরও ২০০ মেগাওয়াটের দুটি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এসব বাস্তবায়ন হলে সোনাগাজী হবে দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ হাব। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একটা সময় ছিল বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল, সবুজ ঘাসের ওপর চরে বেড়াতো গবাদিপশু, বাঁকা নদী সোজাকরণের পর জেগে ওঠা সেই অনাবাদি পতিত জমিগুলোকে কাজে লাগিয়ে ফেনীর সোনাগাজীর চরাঞ্চলে নির্মাণাধীন প্রকল্পটি দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অপার সম্ভাবনার কথা বলছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জীবাশ্ম জ্বালানির নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ধরন ও তাদের ক্রমবর্ধমান খরচ নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারকে তীব্রতর করেছে, যা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত ও কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস করার অন্যতম উপায়। বিষয়টি মাথায় নিয়ে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প। ফেনীর সোনাগাজীর চরচান্দিয়া ও চরদরবেশ ইউনিয়নের ২৮৫ একর জমিতে নেওয়া হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প। সরকারের উদ্যোগে সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পটি চালু হলে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। প্রকল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজের সুযোগ পেয়েছে স্থানীয়দের অনেকে।
রহমত রহমান নামে একজন জানান, বাঁকা নদী সোজাকরণের ফলে এ বিশাল চর জেগে ওঠে। একসময় এ চরে কিছুই ছিল না। নোনা পানি আসায় ফসলও তেমনটা হতো না। এখন এখানে বিশাল কর্মযজ্ঞ হচ্ছে। এখানকার বিদ্যুৎ যাবে ন্যাশনাল গ্রিডে। এটা অভাবনীয় উন্নয়ন।
কবির আহম্মদ নামে একজন জানান, একসময় টুকটাক মাছ ধরে খেতেন। সংসার ঠিকঠাক চলতো না। এখন সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে চাকরি করে সংসার বেশ ভালোই চলে।
সোনাগাজীর সমুদ্র উপকূলে ২০২১ সালে শুরু হয় বৃহত্তম এ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৭৫৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক, বাংলাদেশ সরকার ও ইলেকট্রিক জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি)। ইজিসিবির সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চীনের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সোনাগাজীর বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে যেন অগ্রাধিকার পায় দাবি স্থানীয়দের।
আমজাদ হোসেন নাহিদ নামে স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, সোনাগাজীর যে বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে তা মিটিয়ে যেন অন্য জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এটা সোনাগাজীবাসীর প্রাণের দাবি।
বিরান চরের এ কর্মযজ্ঞ থেকে আশার আলো দেখছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।
স্থানীয় সোনাগাজী চর চান্দিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মিলন বলেন, এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। এখানকার উৎপাদিত পণ্য জাতীয় গ্রিডে যাবে। দেশের বিদ্যুৎ খাতে সোনাগাজীবাসীরও ভূমিকা আছে। এটা কোনো অংশেই কম নয়।
প্রকল্পটির পরিচালক আনোয়ার হোসেন জানান, প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে চলছে প্যানেল বসানোর কাজ। ইতোমধ্যে ১ লাখ ৭৮ হাজার প্যানেলের মধ্যে ৯৬ শতাংশ বসানো হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ডিসেম্বরের শেষের দিকে মিরসরাই বেজা গ্রিড সাব স্টেশনে যোগ হবে এখানকার উৎপাদিত বিদ্যুৎ।
সহকারী প্রকৌশলী আকিবুল হাসান মজুমদার জানান, ৭৫ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার পর এখানে আরও দুটি ১০০ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প পরিকল্পনাধীন রয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সোনাগাজীর এ চরাঞ্চল হবে দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ হাব। প্রাথমিকভাবে যে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তা দিয়ে শিল্প সংযোগ ছাড়া একটা জেলার বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ সম্ভব।
এ প্রকল্পে সূর্যের বিকিরণের ওপর নির্ভর করে ১০০০ ওয়াট পার মিটার স্কয়ারে বিকিরণ হলে তখন ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। ফেনীর সমুদ্র উপকূলের জলোচ্ছ্বাস ও বাতাসের গতিবেগের ১০০ বছরের সমীক্ষার বিবেচনায় গোটা প্রকল্প এলাকায় লবণাক্ত পানি রোধে ৫ মিটার উচ্চতার ৮ কিলোমিটার বাঁধ দেওয়া হয়েছে।