অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে

নিউজ ডেস্ক : ডলার সংকটের পাশাপাশি ২০২৩ সালে ছিল প্রবাসী আয়ে ধীর গতি, বেড়েছে খেলাপি ঋণ, কমেছে রিজার্ভ। এছাড়া ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মে ব্যাংক খাত পড়েছে দুরাবস্থায়। এরপরও ২০২৩ সাল শেষে অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে।

রোববার (৩১ ডিসেম্বর) ছিল ব্যাংক হলিডে। এদিন ব্যাংকগু‌লোর তাদের বিভিন্ন শাখা থেকে পাঠানো হিসাব একত্রিত করে বছরের আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। অধিকাংশ ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। তবে এই পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত হারে প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ এবং করপোরেট কর পরিশোধের পর নিট মুনাফার হিসাব হবে। নিট মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা। নানা উপায়ে ব্যাংকগুলো ভালো পরিচালন মুনাফা দেখালেও অনেক সময় প্রকৃত মুনাফা খুব ভালো করতে পারে না।

সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে বেশি পরিচালক মুনাফা বেড়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা করেছে দুই হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। ২০২২ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল দুই হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (এসআইবিএল) পরিচালন মুনাফা করেছে ৬০০ কোটি টাকা আগের বছর পরিচালন মুনাফা করেছিল ৫২০ কোটি টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকের মুনাফা ৪৫৫ কোটি টাকা, আগের বছর পরিচালন মুনাফা করেছিল ৪১৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে চতুর্থ প্রজন্মের মধুমতি ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ২২২ কোটি টাকা; আগের বছর পরিচালন মুনাফা করেছিল ১৮৮ কোটি টাকা।

এদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে এক হাজার ২৩ কোটি টাকা; ২০২২ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৯২৮ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক মুনাফা পরিচালন মুনাফা করেছে ৭০০ কোটি টাকা; ২০২২ সালে পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ১০৬ কোটি টাকা। কৃষি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৭৪৯ কোটি টাকা; আগের বছর পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৫৬১ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা এক হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা; যা আগের বছর হয়েছিল ১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা।

এছাড়া, রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা নয়, ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-বিডিবিএল এর পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। মেঘনা ব্যাংকের মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের চূড়ান্ত মুনাফা নয়। এই পরিচালন মুনাফা থেকে ঋণের মান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে হয়। এরপর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে করপোরেট কর দিতে হবে। এরপরই চূড়ান্ত হবে ব্যাংকের নেট বা প্রকৃত মুনাফা। নানাভাবে ব্যাংকগুলোর ভালো পরিচালন মুনাফা হলেও আগের বছরগুলোর তুলনামূলক চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে পরবর্তীতে প্রকৃত মুনাফা খুব ভালো অবস্থায় থাকছে না।

তারা বলছেন, ঋণ পরিশোধে নীতি ছাড়ের কারণে অনেক ব্যাংকেরই আদায় কমেছে। কিছু ব্যাংক কৌশলে অনাদায়ী সুদও আয়ের খাতে নিয়ে আসায় পরিচালন মুনাফা বেশি দেখাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদে দেশের ব্যাংক খাতের ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

উল্লেখ্য, দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। প্রতি প্রান্তিকে (তিন মাস) ব্যাংকগুলো তাদের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে জমা দিতে হয়। এই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করতে হয়। এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য সেই তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। নিয়ম অনুযায়ী স্টক এক্সচেঞ্জে জমার দেওয়ার আগে ব্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য জানাতে পারে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে বেশকিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩০ কোটি নতুন বই পাচ্ছে তিন কোটি ৮১ লাখ শিক্ষার্থী
পরবর্তী নিবন্ধশেয়ারবাজারে নতুন বছরে লেনদেন শুরু