রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে আরও একধাপ এগোলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : আমের জন্য সেরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ জেলার আম দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববাজারে সুনাম কুড়িয়েছে বহুবার। তবে এসব কার্যক্রম শুধু আমের সিজনে দেখা যায়। কিন্তু এবার ঘটল ভিন্ন ঘটনা। মুকুল আসার আগেই নিরাপদ, রাসায়নিকমুক্ত ও রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যে চাষিদের সঙ্গে চুক্তি করে বাগান লিজ নিচ্ছে মেসার্স ফার্মইমাজিনেশন (হ্যাপি হাট) নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের মূল লক্ষ্য বিদেশে আম রপ্তানি করা।

আম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন বাড়বে। দ্বার খুলবে বিদেশে আম রপ্তানির। এতে চাঙ্গা হবে এ জেলার অর্থনীতি।

সম্প্রতি জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার আড্ডা বাজার এলাকায় একটি ৪০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেন তারা। পর্যায়ক্রমে জমির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। এই ৪০ বিঘা জমিতে মোট ৮ হাজার আমগাছ রয়েছে। এতে ৬ হাজার আম্রপালি ও দুই হাজার বারি-৪।

উপজেলার আসাদুল ইসলাম, নুর-নবী, কাজি শাহেদ নামের কয়েকজন আমচাষি বলেন, আমাদের আম বাগানের পাশেই ৪০ বিঘা জমিতে নাবি জাতের আম গাছ লাগানো ছিল। কিন্তু তাদের তেমন পরিচর্যা ছিল না। তবে গতকাল থেকে একটি প্রতিষ্ঠান এখানে যুক্ত হলো। এখন থেকে তারা পরিচর্যা করবে। তাদের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তারা বিদেশে আম রপ্তানির জন্য কাজ করছে। আমরা যেহেতু বিদেশে আম রপ্তানি করতে পারি না, তারা যদি বিদেশে আম রপ্তানি করে আমাদের জন্য ভালো হবে।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, এই বাগানগুলোতে এখন থেকে উত্তম কৃষিচর্চা করে আম উৎপাদন করা হবে। আর এতে বাড়বে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন। তাই দেখে এখানকার চাষিরাও উদ্বুদ্ধ হবে। দিন দিন রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন বাড়বে।

হ্যাপি হাটের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহীদ বলেন, আমরা গত বছর এখানকার চাষিদের কাছ থেকে আম কিনে বিদেশে রপ্তানি করেছিলাম। কিন্তু সেই আমের কিছুটা সমস্যা ছিল। সঠিকভাবে ফ্রুট ব্যাগিং না করায় কিছু মাছি পোকার আক্রমণ ছিল। তবুও প্রায় ১০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি করেছিলাম। আগামী বছর আরও বেশি আম বিদেশে রপ্তানি করতে বায়ারদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আর এজন্যই চাষিদের সঙ্গে মিশে গিয়ে নিজেরাই নিরাপদ আম উৎপাদন করবো। আশা করছি এবার ৩০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি করতে পারবো।

এ সময় উপস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারির ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শরফ উদ্দিন বলেন, কয়েক বছর থেকেই শুনছি রপ্তানিকারকদের চাহিদা মতো আমচাষিরা দিতে পারছেন না। কারণ তাদের চাহিদামতো আম ফলাতে অনেক খরচ হয়। কিন্তু অনেক চাষিরা তা করতে চান না। অনেকে পারেন না। আর এজন্যই রপ্তানিকারকরা তাদের চাহিদা মতো আম পান না। তবে যেহেতু এই বাগানটি এখন থেকে রপ্তানিকারকরাই পরিচর্যা করবে, তাই এতে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আম চাষ করা সম্ভব। চলতি বছর বিশ্বের ৩৬টি দেশে বাংলাদেশের আম রপ্তানির কথা রয়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, কৃষকদের সঙ্গে রপ্তানিকারকদের এমন চুক্তি বিদেশে আম রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি উত্তম কৃষিচর্চা ব্যবহারে কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। অন্যদিকে আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এ জেলার আম।

গতবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে ৩৭৬ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়। এর আগে ২০২২ সালে ১৩২ মেট্রিক টন ও ২০২১ সালে ৬৫ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচের বিভিন্ন দেশে। এবছর রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করলেও কৃষি বিভাগের দাবি, রপ্তানির পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধন্যাম সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধএলএনজি সরবরাহে বিঘ্ন, হতে পারে লোডশেডিং