নিউজ ডেস্ক : খেলাপি ঋণ আদায়ে আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে (এডিআর) অর্থ ঋণ আদালত আইনে নির্দেশনা আছে। কিন্তু মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে ব্যাংকের ছাড় না দেওয়ার কারণে খেলাপি ঋণ আদায় ব্যাহত হচ্ছে।
এ দীর্ঘসূত্রিতা এড়িয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের মাধ্যমে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণের কমপক্ষে এক শতাংশ আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
রোববার (১২ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সম্পর্কিত নির্দেশনা জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পাঠানো হয়েছে।
অনাদায়ী পাওনা আদায়সহ অন্যান্য যে কোনো বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে তফসিলি ব্যাংকসমূহকে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আর্বিট্রেশন সেন্টারের (বিআইএসি) সহায়তা গ্রহণ এবং বিভিন্ন পক্ষের সাথে ব্যাংকের সম্পাদিত ঋণ চুক্তিসহ বিভিন্ন চুক্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়।
এরপরও খেলাপি গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধে সদিচ্ছার অভাব, মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে ব্যাংকসমূহের ছাড় না দেওয়ার প্রবণতা, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়া, মধ্যস্থতাকারীর পারিশ্রমিক নির্ধারণ ও পরিশোধে অনীহা বা কালক্ষেপণ, পক্ষ সমূহের মতভেদ দূর করতে মধ্যস্থতাকারী কর্তৃক যথাযথ ভূমিকা না রাখার কারণে অর্থ ঋণ আদালত আইনের আওতায় দায়েরকৃত মামলাসমূহে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে সফলতার হার আশানুরূপ নয়।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) অনুসরণের মাধ্যমে আগামী ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রত্যেক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ন্যূনতম এক শতাংশ নগদ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। প্রতি ষান্মাসিকে অনুষ্ঠিত পরিচালক পর্ষদের সভায় এ সংক্রান্ত অগ্রগতি বিষয়ক স্মারক উপস্থাপন করতে হবে। পরিচালক পর্ষদ আদায় অগ্রগতির বিষয়ে অবগত হয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।
খেলাপি ঋণ আদায়ের চার পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পদক্ষেপগুলো হলো—
=> খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য জারিতব্য নোটিশে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বা সদিচ্ছাকে বিবেচনায় নিয়ে কেস টু কেস ভিত্তিতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
=> ব্যাংকার ও গ্রাহক উভয়পক্ষের সম্মতিতে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আর্বিট্রেশন সেন্টার (বিআইএসি) সহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে তালিকাভুক্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ মধ্যস্থতাকারী অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আইনজীবী, অথবা অন্য যে কোন উপযুক্ত ব্যক্তি যাদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সফলতার ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে তাদেরকে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।
=> মধ্যস্থতাকারী নিযুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিরোধীয় পক্ষগণ ও মধ্যস্থতাকারী পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে পারিশ্রমিকের পরিমাণ, পরিশোধকারী পক্ষ ইত্যাদি নির্ধারণ এবং যথাসময়ে তা পরিশোধ নিশ্চিত করা।
=> মধ্যস্থতাকে সফল করা এবং খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ের স্বার্থে প্রয়োজনে কেস টু কেস ভিত্তিতে বিদ্যমান বিআরপিডি সার্কুলার/নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংক কর্তৃক ছাড় প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, মধ্যস্থতার মাধ্যমে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী শাখা বা সংশ্লিষ্ট টিম-কে স্বীকৃতি প্রদান বা পুরস্কৃত করার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা রেখে ব্যাংকসমূহ বিদ্যমান আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারসমূহের নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং মধ্যস্থতায় ব্যর্থতার ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধান করতে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।