নিউজ ডেস্ক : আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটিতে ঢাকা থেকে নৌপথে ভ্রমণকারী যাত্রীদের সংখ্যা ঈদুল ফিতরের তুলনায় বেশি হতে পারে। এবার নৌপথে ঢাকা ছাড়বে ২০ লাখের বেশি মানিুষ। ফলে সম্ভাব্য ভিড়, অব্যবস্থাপনা এবং ব্যস্ত ভ্রমণের সময় বিপত্তি দেখা দিতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং নদী পরিবহণের সঙ্গে সম্পৃক্তরা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) থেকে রোববার পর্যন্ত ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে ২০ লাখের বেশি মানুষ উপকূলীয় জেলাগুলোতে যাতায়াত করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম (এসসিআরএফ) জানিয়েছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা অঞ্চলের সোয়া দুই লাখ মানুষ বৃহত্তর বরিশাল জেলায় যাবেন। কিন্তু এবার ঈদের আগে মাত্র চার দিন সময় পাবেন ঘরমুখো মানুষ, তাই নৌযানে চাপ বেশি পড়বে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এসসিআরএফের সভাপতি আশীষ কুমার দে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে নৌপথে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। কিন্তু তারপরও বিশেষ করে ঈদের সময় যাত্রী পরিবহণের সক্ষমতা অপ্রতুল। মাত্র চার দিনের মধ্যে ৯০টি লঞ্চ এত বিপুল একমুখী যাত্রী বহন, অতিরিক্ত ভিড়সহ অব্যবস্থাপনা এবং যাত্রীদের অস্বস্তির সম্ভাবনা বড় আকার ধারণ করেছে।’
আগামী সোমবার (১৭ জুন) সারা দেশে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ঈদের দিন, তার আগের দিন রোববার এবং পরদিন মঙ্গলবার সরকারি ছুটি থাকবে। তার আগে এই সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস আগামীকাল এবং এরপর শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। যারা নিজ শহরে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে চান তারা আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা ছাড়তে শুরু করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার ৯৫ শতাংশ নৌযাত্রী ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট নদীবন্দর) ব্যবহার করবে।
ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের আওতায় সদরঘাট টার্মিনাল থেকে মোট ১৮০টি লঞ্চ চলাচল করবে। এসব নৌপরিবহণের মধ্যে ঢাকা ছাড়বে ৯০টি, বিভিন্ন স্থান থেকে ৯০টি ঢাকায় আসবে। কিন্তু চার দিনে ৯০টি লঞ্চ দিয়ে বিপুল সংখ্যক ওয়ানওয়ে যাত্রী নির্বিঘ্নে পরিবহণ করা সম্ভব হবে না।
জাতীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শহীদ মিয়া বলেন, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ যেমন রয়েছে, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে আরও সজাগ থাকতে হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও ট্রাফিক) আলমগীর কবির বলেন, ‘ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ভ্রমণকারীরা যাতে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন, সেজন্য আমরা ইতোমধ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে আলমগীর কবির বলেন, ‘গন্তব্যে যাওয়ার পথে সবগুলো লঞ্চ ঢাকা নদীবন্দরের পাশাপাশি নিকটবর্তী বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত। তাই যাত্রার সময় কোনো ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের (লঞ্চ) জানানো হবে।’
ঢাকা নদীবন্দরের দায়িত্বে থাকা আলমগীর কবির জানান, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিআইডব্লিউটিসির বিশেষ স্টিমার সার্ভিস চালু হবে। এসব স্টিমার ঢাকা নদীবন্দর থেকে ১৩, ১৬ ও ২০ জুন মোরেলগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এবং ১৪, ১৮ ও ২২ জুন মোরেলগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপথ যাত্রীবাহী পরিবহণ সমিতির (বিআইডব্লিউটিএ) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে তাদের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।
এবারের ঈদযাত্রায় সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ‘আমাদের লঞ্চগুলো বর্তমান আবহাওয়া অনুযায়ী চলতে সক্ষম। এ ছাড়া আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিয়মিত আবহাওয়ার সতর্কতা পাচ্ছি।’
ঈদে ঘরমুখো মানুষ ঝামেলামুক্ত ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির।