নিউজ ডেস্ক : প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও গতিশীলতা বাড়াতে সাত দফা প্রস্তাব জানিয়েছে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) বিকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী বরাবর এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করেন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক।
বিনিয়োগকারীদের দাবিগুলো হলো-
ক্যাপিটাল গেইনের উপর কর প্রত্যাহার: পুঁজিবাজারে ৫০ লাখ টাকার উপর ক্যাপিটাল গেইনের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি। এতে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা আরও বেশী বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে।
লভ্যাংশের উপর ট্যাক্স প্রত্যাহার: লভ্যাংশের উপর থেকে ট্যাক্স সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণার পূর্বে সরকারকে অগ্রীম যে ট্যাক্স প্রদান করে থাকে, সেটাকে চূড়ান্ত ট্যাক্স হিসাবে গণ্য করার দাবি করছি। তাহলে ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়বে এবং অস্থিরতা কমবে।
কর হারের ব্যবধান: পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত কোম্পানি ও অতালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যকার করহারের ব্যবধান মাত্র ৫ শতাংশ। চূড়ান্ত বাজেটে এই হারের ব্যবধান ১০ শতাংশ করার দাবি করছি। এতে ভালোমানের কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত হবে।
কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো: তালিকাভূক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট ট্যাক্স ১৫ শতাংশ করার দাবি জানাচ্ছি। এর ফলে বহু ভালোমানের স্বনামধন্য কোম্পানি, বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি ও সরকারি লাভজনক প্রতিষ্ঠান তালিকাভূক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহিত হবে।
অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ: অপ্রদর্শিত অর্থ সহজ শর্তে শুধু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। তাতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। পুঁজিবাজার গতিশীল হবে, বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হবে এবং সরকারও প্রচুর রাজস্ব পাবে।
উপযুক্ত লভ্যাংশ প্রদান: পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত অনেক কোম্পানি ভালো মুনাফা অর্জন করা স্বত্ত্বেও উপযুক্ত লভ্যাংশ প্রদানে গড়িমসি করে। কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ হিসাবে প্রদানের ব্যবস্থা করার জোর দাবি করছি। উপযুক্ত লভ্যাংশ পাওয়ার প্রত্যাশায় পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বাড়বে এবং পুঁজিবাজারও স্থিতিশীল হবে।
অর্থের যোগান: বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ রাখার জন্য জোর দাবি জানানো হচ্ছে। এতে পুঁজিবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পাবে এবং পুঁজিবাজারের এ দুঃসময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে সক্ষম হবে।
চিঠিতে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে মহাধসের কবলে পড়ে বহু বিনিয়োগকারী চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ৩৭ জন বিনিয়োগকারী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন। পুঁজিবাজারের পতনের দায় তখন সরকারের উপর পড়েছিল। এরপর থেকে আর পুঁজিবাজার পূর্ণাঙ্গ স্থায়ী স্থিতিশীলতা পায়নি। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে বর্তমানে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও পুঁজিবাজারের মন্দাভাবের কারনে তা বারবার ম্লান হচ্ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পরিচালনা পর্ষদ পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কোনভাবেই পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা পায়নি।
বর্তমানে পুঁজিবাজারের অবস্থা খুবই নাজুক। গত ৬ জুন অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছেন। দেশের অগ্রযাত্রা, প্রবৃদ্ধি অর্জন ও উন্নয়নে এই বাজেট অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার উন্নয়নে বেশকিছু প্রস্তাবনা রয়েছে। আমরা বাজেটকে স্বাগত জানাই এবং চূড়ান্ত বাজেটে নিম্নলিখিত দাবিগুলো সংযোজন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।