নিউজ ডেস্ক : কক্সবাজারের ইয়াবা কারবারে সাবেক বিতর্কিত সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) রাতে চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে হেফাজতে নেয় র্যাব।
রাতে গ্রেফতারের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের টেকনাফে হত্যাচেষ্টা মামলায় ইয়াবা গডফাদার আব্দুর রহমান বদিকে চট্টগ্রামের পাচলাইশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে বিভিন্ন সময় কক্সবাজার-টেকনাফ কেন্দ্রীক ইয়াবা সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠে বদির বিরুদ্ধে। তবে তিনি প্রত্যেকবার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।
তবে চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল আব্দুর রহমান বদির দুই ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। কক্সবাজারের ১০ মাদক গডফাদারের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে বলে জানায় সংস্থাটি।
অভিযোগ আছে, বদি তার প্রকাশ্য ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা পাচারে জড়িত। আর তার সম্পদের একটি বড় অংশই আসে মিয়ানমার থেকে মাদক এনে। গত কয়েক বছর ধরে বহুবার এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বদিকে মাদকের গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত করেছে একাধিকবার।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইয়াবার অন্য বড় পাচারকারী বা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বদির মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এই কাজ করতে পারবেন না।
প্রতিবেদন অনুযায়ী বদির ভাই মুজিবুর রহমান ও আবদুল শুক্কুর এবং চাচাতো ভাই মং মং সেনও ইয়াবার গডফাদার।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কক্সবাজারে ইয়াবার ১২০ জন তালিকাভুক্ত পাচারকারী আছে। আর সবার আগে নাম আছে বদির।
বদি ১৯৯৬ সালে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন। পরে ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান।
ওই বছর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় বদি জানান, তিনি বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে বছরে এক লাখ ৭৬ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র ও শেয়ার থেকে ৯১ হাজার ৯৮ টাকা এবং ৩৩ হাজার ৬০০ টাকা আয় করেন লবণ মাঠ থেকে। অর্থাৎ তার বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকার কম ছিল সে সময়। সে সময় তিনি জানান, তার ওপর নির্ভরশীলরা বছরে দুই লাখ ২৫ হাজার টাকা আয় করেন।
তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বদি জানান, তিনি কৃষি থেকে চার হাজার ৬৫০ টাকা, বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে দুই কোটি আট লাখ, ব্যবসা থেকে পাঁচ কোটি ৩২ লাখ, সঞ্চয়পত্র ও শেয়ার থেকে আট কোটি পাঁচ লাখ এবং লবণের মাঠ থেকে ৯১ হাজার টাকা আয় করেন বছরে।
এই হিসাবে তখন বদির বছরে আয় দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় দাঁড়ায় তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
এই আওয়ামী লীগ নেতা ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি। তার স্ত্রী শাহীন আক্তার পান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন।