
নিউজ ডেস্ক:
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খুবই ভঙ্গুর, গাজার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ জন্য এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পুনর্বিবেচনা করতে পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পুনর্বিবেচনার জন্য একটি কমিটি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারি। আবেদনের সঙ্গে যথাযথ কারণ ও কি করবো সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে। একটা বিশ্বাসযোগ্য রোডম্যাপ দিতে হবে। আমরা সে দিকেই যাবো, তবে আমাদের একটা পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ দিতে হবে। সেটার কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, এ দায়িত্ব পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে আমি হয়তো কিছু করতে পারবো। বাংলাদেশে এখন ক্রাইসিস সময় চলছে।
দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- দেশে গাজার মতো অবস্থা চলছে। সবখাতেই দুর্নীতি হয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতি ও ভঙ্গুর অবস্থা আমরা এর আগে কোনো দেশে দেখিনি। আমাদের জিডিপির গ্রোথে প্রভাব না পড়লেও অন্যান্য খাতে ভঙ্গুর অবস্থা। এখানে লুকোচুরি কোনো বিষয় নেই।
দেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে সেখানে আপনারা কি কাজ করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি একটা বিষয়ে গুরুত্ব দিতে চাই, সেটা হলো ভুয়া ডাটা বা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা যে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ (এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন) যেতে চাচ্ছি। সে বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের বৈদেশিক নির্ভরতা বেড়ে গেছে। এটা হয়েছে ২০১০ সাল থেকে। একই সঙ্গে আমাদের অভ্যন্তরীণ যে রিসোর্সগুলো ভঙ্গুর হয়ে গেছে।
আমাদের যে পরবর্তী বাজেট আসবে তার রিসোর্স কোথায়? আমাকে যদি আরও ঋণ নিতে হয়, তাহলে আরও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। এ রিসোর্স মোবিলাইজ করা খুব সহজ না। তবে আমাদের উন্নতির মধ্যে শুধু আমাদের প্রত্যেকের আয় বেড়েছে। আমরা মধ্যম আয়ে চলে গেছি। সে অনুযায়ী আমাদের রাজস্ব বাড়ার কথা ছিল, কিন্তু সেগুলো গেলো কোথায়। তাই মানুষকে ট্যাক্স দিতে উৎসাহিত করতে হবে। আমি ট্যাক্স দেবো না অথচ আশা করবো সরকার আমাকে সেবা দেবে।
এলডিসির জন্য যে সূচকগুলো ছিল সেগুলো কি ভুয়া ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার এ বিশেষ সহকারী বলেন, মনে করুন সব সঠিক, কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি কি? আমরা যে বাজার সুবিধাটা পাই সেটার ৮৫ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাকখাতে। এখানে আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। ২০১৮ সাল থেকে বলছি আমরা এলডিসি থেকে বেড়িয়ে আসবো। আজকে ২০২৫ সাল এ ৭ বছরে আমাদের একটা খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমলো না কেন?
তাহলে কি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত বা পুনর্মূল্যায়ন চাচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখনও সেই সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। আমাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে ব্যবসায়ী ও তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের সঙ্গে বসতে হবে। আমাদের পুনর্বিবেচনার জন্য কমিটি হয়েছে, দ্রুতই একটা সিদ্ধান্তে আসবো। তবে এখনই এটা বলতে পারবো না।
বাংলাদেশ চাইলেই কি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন স্থগিত করতে পারবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশের হাতে পুরোপুরি না, তবে আমাদের অধিকার আছে আমরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারি। আবেদনের সঙ্গে যথাযথ কারণ ও কি করবো সে বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে। একটা বিশ্বাসযোগ্য রোডম্যাপ দিতে হবে। আমরা সে দিকেই যাবো তবে আমাদের একটা পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ দিতে হবে। সেটার কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
অনেক দিন ধরে দেখছি বাংলাদেশে কোনো বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান নেই এবং অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খুবই ভঙ্গুর। গাজার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ থেকে বুঝে নেবেন আপনারা দেশের অবস্থা কেমন। এ মুহূর্তে কি গাজায় কেউ বিনিয়োগ করবে। একটা আরেকটার সঙ্গে লিংক।
এছাড়া আরেকটা কারণ হলো আপনারা বর্তমান সরকারকে বলছেন ইন্টার্নি। আমি যখন বিনিয়োগকারী হই তখন আমি চিন্তা করবো একটা ইন্টার্নি সরকারের দেশে বিনিয়োগ করবো কি করবো না। মূলত রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক আছে। আমরা রাজনীতির চিন্তা করতে গিয়ে অর্থনীতির চিন্তা করিনি। আমরা একসঙ্গে দুইটার চিন্তা করলে আজকে সব কিছুর চিন্তা করতে পারতাম।