নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে আর্থিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্টের (বিআইপিডি) এফডিআরের অর্থ আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। গত তিন বছর ধরে বিআইপিডর মোট ১ কোটি ৮ লাখ ৩৫ লাখ টাকা পরিশোধ করছে না ফারইস্ট ফাইন্যান্স। ফলে বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পরেছে বিআইপিডি।
এরই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে অভিযোগ করেছে বিআইপিডি। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকে বিআইপিডির আটকে রাখা এফডিআরের অর্থ পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
সম্প্রতি ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়টি বিআইপিডির মহাপরিচালক কাজী মো. মর্তুজা আলীকেও অবহিত করা হয়েছে।
বিএসইসির পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছে বিআইপিডি। এ পরিস্থিতিতে ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
এর আগে একটি চিঠিতে বিআইপিডি অভিযোগ করে বিএসইসিকে জানায়, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বিআইপিডির প্রাপ্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অন্যায়ভবে প্রায় তিন বছর ধরে পরিশোধ করছে না। এ বিষয়ে কোম্পানিটিকে ২০১৮ সাল হতে এ যাবৎ তেত্রিশটি পত্র প্রদান করা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি এফডিআরের হালনাগাদ তথ্যও প্রদান করছে না। কিন্তু গ্রাহক হিসেবে হিসাব সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তির পূর্ণ অধিকার আমাদের রয়েছে। পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে বিআইডপির ট্যাক্স রিটার্ন প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। বিআইপিডি বর্তমানে এতটাই আর্থিক সংঙ্কটে আছে যে দৈনিক অফিস খরচ ও ট্যাক্স প্রদান করতে পারছে না। ফারইস্ট ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্টের অন্যায় ও অযৌক্তিক কর্মকাণ্ডের ফলে বিআইপিডির মতো একটি সম্ভাবনাময় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতি সদয়ভাবে বিবেচনা করে, ফারইস্ট ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড-কে বিআইপিডির সমুদয় অর্থ হালনাগাদ লাভসহ অনতিবিলম্বে পরিশোধের সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদানের জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিআইপিডির অপর এক চিঠি উল্লেখ করা হয়, ফারইস্ট ফাইন্যান্স দীর্ঘদিন যাবৎ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) ইস্যুকৃত ২০১৮ সালের অক্টোবরে একটি প্রজ্ঞাপনের অজুহাতে বিআইপিডির ছয়টি মেয়াদোত্তীর্ণ এফডিআরের সর্বমোট ১ কোটি ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে আটক করে রেখেছে। এ বিষয়ে ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট ফারইস্ট ফাইন্যান্স জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিআইসি বরাবর পত্র প্রেরণ করে এবং তাদের নির্দেশনা চায়। অন্যথায় তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী বিআইপিডির এফডিআর নগদায়নের ব্যবস্থা নেবে বলে অবহিত করে। কিন্তু পত্র প্রদানের পর ২৯ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোম্পানিটি অদ্যবধি কোনো অর্থ বিআইপিডিকে পরিশোধ করেনি। তাই কোম্পানিটিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে বিআইপিডির মহাপরিচালক কাজী মো. মর্তুজা আলী বলেন, ‘ফারইস্ট ফাইন্যান্সকে আমাদের এফডিআরের অর্থ পরিশোধ করার জন্য বিএসইসি নির্দেশ দিয়েছে বলে জেনেছি। তবে এখনও পর্যন্ত আমরা কোনো অর্থ বুঝে পাইনি।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিআপিডির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফারইস্টট ফাইন্যান্সকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’