নিউজ ডেস্ক :
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির এক নেতার অনুরোধ এবং আমন্ত্রণে জেএমসেন হল মণ্ডপে ইসলামী ভাবধারার সংগীত পরিবেশন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ (শুক্রবার) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
গতকাল জেএমসেন হল পূজামণ্ডপে ইসলামী ভাবধারার সংগীত পরিবেশন করে চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমি নামে একটি সংগঠনের ছয় শিল্পী। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে পুলিশ গান পরিবেশনকারী দুই শিল্পীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) রইছ উদ্দিন।
তিনি বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে প্রতিদিনের মতো জেএমসেন হল পূজা মণ্ডপে শিল্পীদের মাধ্যমে সন্ধ্যার পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন পূজা মণ্ডপে আসেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতে থাকেন। ইতোপূর্বে পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পীকে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করেন। তার অনুরোধের প্রেক্ষিতে ঘটনার সময় ওই সংগঠনের সদস্য শহীদুল করিম, মো. নুরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ ইকবাল, রনি, গোলাম মোস্তফা ও মো. মামুন পূজার অনুষ্ঠানে আসেন এবং একটি ইসলামিক গজল ও একটি বাউল গান পরিবেশ করেন।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে একটি গানের ভাষায় শব্দ চয়ন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ইতোমধ্যে অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা দুটি গান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়াসহ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘাত লাগানোর চেষ্টা ছিল কি না তা যাচাই করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপ-কমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, এই দলকে আমন্ত্রণ জানানো পূজা উদযাপন কমিটির নেতা সজল দত্তকেও খোঁজা হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ঘটনার বিষয়ে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামান জানিয়েছেন, মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে সেখানে গান দুটি পরিবেশন করা করেছে। এগুলো সম্প্রীতির সংগীত। এরমধ্যে একটি হচ্ছে আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম…. এবং শুধু মুসলমানের লাগি আসে নাকো ইসলাম…।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক সংবাদকর্মী জানান, সঞ্চালক ঘোষণা করলেন চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমির শিল্পীরা গাইবেন। তখন তারা দুটি সঙ্গীত পরিবেশন করেন। অনেকে বলছেন জোর করে গাওয়া হয়েছে। আসলে তেমন কিছু সেখানে ঘটেনি। বরং সঞ্চালক নিজেই তাদের গাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আ জ ম ওবায়দুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পূজা পরিষদের নেতারা একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আমন্ত্রণ দিয়ে নিয়ে গেছে। সংগঠনটি জামায়াত বা শিবিরের কারও নয়। তবে আমাদের সমমনা অনেকে এ ধরনের সাংস্কৃতিক সংগঠন খুলে থাকে। এরকম একটি সংগঠন দুটি সংগীত পরিবেশন করেছে। এগুলো তো সম্প্রীতির সংগীত। যদিও এ ধরনের সংগীত পরিবেশন পূজামণ্ডপে পরিবেশন না করলেও পারত সংগঠনটি।