ছয় মাসে ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বিপিসির: চেয়ারম্যান

নিউজ ডেস্ক:

আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড নিয়মের চেয়ে আমাদের জিটুজি পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম প্রাইজ বেশি ছিল। জ্বালানি তেল সরবরাহকারীদের সঙ্গে আমরা নেগোশিয়েশন করে প্রিমিয়াম কমিয়ে এনেছি। প্রত্যেক আইটেমেই প্রিমিয়াম কমেছে। এতে আগামী ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) জ্বালানি আমদানির প্রিমিয়ামে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আমিন উল আহসান।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) কারওয়ান বাজার বিপিসির লিয়াজোঁ অফিসে ‘দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় বিপিসির ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান। এসময় বিপিসির সচিব শাহিনা সুলতানা, বিপিসির পরিচালক (বিপণন) কবীর মাহমুদ, পরিচালক (অপারেশন ও পরিচালন) অনুপম বড়ুয়া, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (হিসাব) এটিএম সেলিমসহ বিপিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা প্রতিযোগিতামূলক ক্রয়াদেশ প্রদান এবং আলোচনার মাধ্যমে প্রিমিয়াম খরচ অনেকটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। গত জুলাই-ডিসেম্বরে প্রিমিয়াম খরচ ৮.৮৩ ডলারের নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আগে জিটুজি ভিত্তিতে আনা জ্বালানি তেলে ১২.০৩ ডলার এবং দরপত্রের মাধ্যমে আনা তেলে ৯.৩২ ডলার পরিশোধ করা হতো। প্রিমিয়াম খরচ কমে যাওয়ায় বিদায়ী জুলাই-ডিসেম্বর মাসেও বিপুল পরিমাণ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এভাবে আমরা তেলের দাম কমিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। পাশাপাশি আমরা তেল সরবরাহকারী কম্পানির বকেয়া শূন্যে নামিয়ে এনেছি।

তিনি বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্স দেওয়ার পর ডিজেলে লিটার প্রতি ১.৬৬ টাকা মুনাফা করছে। দাম কিছুটা কমানোর সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে এখনো আমাদের জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটারে ২২ থেকে ২৫ টাকার মতো কম আছে। সাধারণত দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি তেলের দরের পার্থক্য বেশি হলে পাচারের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এ ছাড়া দেশের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্যও একটি কৌশল প্রয়োগ করা হয়। হঠাৎ বেড়ে গেলে যাতে ভোক্তার উপর বড় চাপ না পড়ে।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন চালু হলে প্রিমিয়াম খরচ আরও কমে আসবে। পাইপলাইনটি চালু হলে সাগরে আসা বড় জাহাজ থেকে ডিজেল সরাসরি নারায়ণগঞ্জ ডিপোতে চলে আসবে। প্রকল্পটি জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ডিজেলের পাশাপাশি অল্প পরিমাণে অকটেনের ব্যবহার কমেছে। আগের অর্থবছরে অকটেনের ব্যবহার ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫৭ টন, যা গত অর্থবছরে হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ২৫৬ টন। তবে ব্যবহার বেড়েছে উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট-এ-১ এর। আগের বছরের তুলনায় ৬৯ হাজার ৪৯৪ টন ব্যবহার বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৭ লাখ ৬১ হাজার ৩২০ টন জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ এসেছে দেশীয় উত্স থেকে, আর ৯২ শতাংশ জ্বালানি জোগান এসেছে আমদানি থেকে। ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের মধ্যে ৬৩ শতাংশ হচ্ছে ডিজেল। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েল ১৪ শতাংশ।

জানা যায়, বর্তমানে বিপিসিকে সরকার টু সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে নয়টি প্রতিষ্ঠান। এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কম্পানি, ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি, ইউনিপেক, পেট্রো চায়না ইন্টারন্যাশনাল, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন, পিটিটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং, কুয়েত পেট্রোলিয়ম কর্পোরেশন, মালয়েশিয়ার পেটকো ট্রেডিং লাবুয়ান কম্পানি ও ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি। এছাড়াও আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তেল সরবরাহ করছে আরও চারটি কম্পানি। ভিটল এশিয়া, ইউনিপেক, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন ও পেট্রো চায়না ইন্টারন্যাশনাল।

বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বছরে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৭৪ লাখ মেট্রিক টন। মোট চাহিদার প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেলই ব্যবহার হয়। বাকিটুকু চাহিদা পূরণ হয় পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিন, জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেলে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসলামী ব্যাংকের বঙ্গবাজার উপ শাখা উদ্বোধন
পরবর্তী নিবন্ধবাড়লো সূচক, লেনদেন তিনশ কোটি টাকার নিচেই