বিমার দাপটে শেয়ারবাজার, রেকর্ড লেনদেন

নিজস্ব প্রতিবেদক গত কয়েক দিনের মতো সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার শেয়ারবাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দাপট দেখিয়েছে বিমা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। একাধিক বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়েছে। বিমার দাপটেই মূল্যসূচকের মোটামুটি বড় উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে বছরের সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে দাপট দেখিয়ে চলেছে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো। এতে একাধিক বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম ৪০ শতাংশের ওপরে বেড়ে গেছে। গত কয়েক দিনের মতো রোববারও লেনদেনের শুরু থেকেই শেয়ারবাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখাতে থাকে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো।

এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শুরু হতেই প্রায় সবকটি বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়ে যায়। লেনদেনের সময় গাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বিমা কোম্পানিগুলোর দাপট বাড়তে থাকে। লেনদেনের আধাঘণ্টার মধ্যেই একাধিক বিমা কোম্পানির শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়ে যায়।

লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া বিমা কোম্পানিগুলোর এ দাপট লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ফলে সার্বিক শেয়বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। দিনের লেনদেন শেষে মূল্যসূচক ও লেনদেন বাড়ার পাশাপাশি দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেয় বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ১০২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বিপরীতে ৭৭টির দাম কমেছে। আর ১৮২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৫টির শেয়ার ও ইউনিটের দম একদিনে যতটুকু বাড়া সম্ভব ততটুকুই বেড়েছে। লেনদেনের একপর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের বিক্রেতা উধাও হয়ে যায় এবং দিনের সর্বোচ্চ দামে বিপুল পরিমাণ ক্রয় আদেশ আসে।

দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিমা কোম্পানি রয়েছে ৭টি। লেনদেনের অল্প সময়ের মধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেড়ে দিনের সর্বোচ্চ সীমায় চলে যায়। অবশ্য শুধু এ সাত বিমা কোম্পানি নয়, প্রায় সবকটি বিমা কোম্পানির শেয়ার আজ দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে। বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪টির।

বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বাড়ার এমন দাপটের কারণেই মূল্যসূচকেও ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিলেছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৩৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় দশমিক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৯৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

মূল্যসূচক বাড়ানোর পাশাপাশি লেনদেনের গতি বাড়াতেও ভূমিকা রেখেছে বিমা খাতের কোম্পানিগুলো। ফলে ডিএসইতে বছরের সর্বোচ্চ লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ৩৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৩৮ কোটি ২ লাখ টাকা।

লেনদেন শুধু আগের দিনের তুলনায় বাড়েনি, গত বছরের ৮ নভেম্বরের পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। গত বছরের ৮ নভেম্বর ডিএসইতে ১ হাজার ৪৯৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর বাজারটিতে আর ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার লেনদেনের দেখা মিলেনি।

ডিএসইতে বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন হওয়ার দিনে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ৭২ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নাভানা ফার্মার ৩৫ কোটি ২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, জেএমআই হসপিটাল, রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স এবং মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৭টির এবং ১০৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমনের উৎপাদন বাড়াতে ৩৩ কোটি টাকার প্রণোদনা
পরবর্তী নিবন্ধসোনার দাম ভরিতে ১৭৪৯ টাকা কমেছে