শিক্ষা-শিল্পখাতের মধ্যে আস্থার ঘাটতি নিরসন জরুরি: শিক্ষামন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক : দেশে শিক্ষা ও শিল্পখাতের মধ্যে আস্থার কিছুটা ঘাটতি আছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষা ও শিল্পখাতের সমন্বয় নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা চলছে। এখন সময় এসেছে সেটাকে বাস্তাবে রূপ দেওয়ার। এজন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ জরুরি। আমাদের শিক্ষা ও শিল্পখাতের মধ্যে কিছুটা আস্থার ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে, যার নিরসন একান্ত জরুরি।

শনিবার (৮ জুলাই) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘শিল্প-শিক্ষা খাতের সমন্বয়: পরিবর্তশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সেমিনারে শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি ‘রূপান্তর’ আনায়নের লক্ষ্যে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান’ তৈরির আহ্বান জানিয়ে দীপু মনি বলেন, দেশে জনবল তৈরির লক্ষ্যে একটি ইকো-সিস্টেম প্রণয়ন করতে হবে, যাতে করে ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বেশকিছু হাইটেক আইটি পার্ক গঠন করছে, তবে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ বাড়াতে স্থানীয়ভাবে দক্ষ মানবম্পদের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগ ও তার যথাযথ বাস্তাবয়ন জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রম বাড়াতে এগুলোর বাণিজ্যিকীকরণে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন। সম্মানিতে অতিথি ছিলেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ।

তিনি বলেন, পরিবর্তনশীল বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আমাদের শিক্ষার্থীদের উপযোগী ও দক্ষ করে তুলতে শিক্ষা ও শিল্পখাত এবং সরকারের সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এনএসডিতে ১৪টি পরিষদ গঠন করা হয়েছে, যেখান থেকে সমসাময়িক বিষয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে।

নাসরীন আফরোজ বলেন, ‘মানব সম্পদ উন্নয়ন তহবিল’ থেকে দক্ষতা উন্নয়নে পরিচালিত কার্যক্রমে আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যেখান থেকে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা করা হবে।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, আমাদের শিল্পখাত পরিচালনায় অনেক বিদেশি কর্মী কাজ করছে, যাদের বেতন-ভাতা হিসাবে বছরে ৮-১০ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। এজন্য আমাদের গুণগত শিক্ষাব্যবস্থার অনুপস্থিতি ও দক্ষ জনশক্তির অভাবকে দায়ী করা হয়। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষা ও শিল্পখাতের সমন্বয় বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।

ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার আরও বলেন, শিল্পখাতের প্রয়োজনের নিরিখে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিকল্পে শিক্ষা ও শিল্পখাতের সমন্বয় আরও জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। তবে বাংলাদেশে এ সমন্বয়ের অভাব অত্যন্ত প্রকট, যার ফলে আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীকে শিল্পখাতের জন্য দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। এর প্রভাব প্রতিফলিত হচ্ছে সামগ্রিক আর্থনীতিতে।

তিনি শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি বিশেষ করে গবেষণা ও উন্নয়নখাতে বরাদ্দ আরও সম্প্রসারণের আহ্বান জানান। একইসঙ্গে একটি ন্যাশনাল এমপ্লয়মেন্ট ডাটাবেজ প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়েমা হক বিদিশা সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ক্রমাগত পরিবর্তনশীল এ বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি। এটাকে মোকাবিলায় শিক্ষা ও শিল্পখাতে প্রয়োজনীয় সমন্বয় এখনো পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

তিনি জানান, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের তথ্য অনুযায়ী- ২০২৭ সালের মধ্যে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতাগুলো হবে, ‘এনালিটিক্যাল থিংকিং’, ‘ক্রিয়েটিভিটি থিংকিং’ এবং ‘এআই ও বিগ ডাটা এনালাইসিস’ খাতে। আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যুগোপযোগী করতে পারলে মানবসম্পদ খাতে বৈশ্বিক চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

এছাড়া প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে মানসম্পন্ন শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিতকরণের ওপর তিনি জোর দেন। শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা কার্যক্রম সম্প্রসারণ, চাকরিপ্রার্থীদের পাশাপাশি চাকরিপ্রাপ্তির সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রের একটি ডাটাবেজ প্রণয়নের আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি টমো পুটিনেন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভার্নিং বডির সদস্য সাফকাত হায়দার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন।

আলোচকরা বলেন, সব স্তরে মানসম্মত শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ, নীতি সহায়তা ও বিদ্যমান আইনের সংষ্কার, গবেষণা ও উন্নয়নে খাতে আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের পাশাপাশি বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিক্ষা ও শিল্পখাতের মিথষ্ক্রিয়া বাড়ানো, কাজের ক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন এবং অবকাঠামোর উন্নয়নের ওপর জোর দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকদিনে রেকর্ড ৮২০ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীকে ‘আনারস’ উপহার পাঠালেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী