নিউজ ডেস্ক : ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর দুই কার্যদিবস মূল্যসূচক বাড়ার পর বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দেশের শেয়ারবাজারে আবার বড় দরপতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। সেইসঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
প্রায় দেড় বছর পর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শেয়ারবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কথা জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম ধাসে ৩৫ প্রতিষ্ঠান বাদে সবগুলো থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হয়।
ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে রোববার লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ২১৪ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে শেষ দিকে বিক্রির চাপ কমায় প্রধান সূচক ৯৬ পয়েন্ট কমে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
পরের কার্যদিবস সোমবার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি বাড়ে সবকটি মূল্যসূচক। সেইসঙ্গে প্রায় ছয় মাস পর ডিএসইতে হাজার কোটি টার ওপরে লেনদেন হয়। এ পরিস্থিতিতে সোমবার বিকালে আরও ২৩ প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়।
পরের কার্যদিবস মঙ্গলবার বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমলেও বাড়ে মূল্যসূচক। সেইসঙ্গে লেনদেন বেড়ে সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়। এ পরিস্থিতিতে বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেরে দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।
তবে লেনদেনের সময় পাঁচ মিনিট গড়ানোর আগেই সূচক ইতিবাচক ধারায় ফেরে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার কারণে লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এ পর্যায়ে হঠাৎ বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। ফলে দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত চলে এ প্রবণতা।
এতে দিনের লেনদেন শেষে সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হওয়ার পাশাপশি দাম কমার তালিকায় নাম লেখায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ৬১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৫টির। আর ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪৯ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২২৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৭২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৯ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৩৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা কমেছে। তবে হাজার কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৭৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ১৭৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
এ লেনদেন বাড়াতে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে সোনালী পেপারের শেয়ার। দিনভর কোম্পানিটির ৬৬ কোটি ৩৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফু-ওয়াং ফুডের ৪১ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৩৪ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশ।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম, আইএফআইসি ব্যাংক, একমি পেস্টিসাইড, ইস্টার্ন হাউজিং, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, দেশবন্ধু পলিমার এবং ফরচুন সুজ।
অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩৪৭ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৭৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২০৪টির এবং ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।